মশিউর আনন্দ:
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এউড উপ-পরিষদের উদ্যোগে আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তন, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-এ আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবীবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু এবং সভার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।
সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রম শুধুমাত্র মামলা মোকাদ্দমা পরিচালনায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেটা আমাদের ভাবতে হবে। মহামান্য উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায় নারীর অধিকার রক্ষায় কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারছে সেটাও আমাদের দেখা প্রয়োজন। আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলন এবং আইন সংস্কার আন্দোলনে প্যানেল আইনজীবীদের সুচিন্তিত মতামত ও সহযোগিতা পেয়ে থাকি।
মালেকা বানু বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্যানেল আইনজীবীবৃন্দ নিরবিচ্ছন্ন আইনগত সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা করে আসছে। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে কিভাবে আরো গতিশীল এবং অগ্রসরমান করা যায় সেক্ষেত্রে প্যানেল আইনজীবীদের পরামর্শ ও মতামত আহ্বান করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অনেক প্যানেল আইনজীবীকে আমরা হারিয়েছি। তাই তরুণ আইনজীবীদেরকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। মহামান্য উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতের বিভিন্ন পদ্ধতিগত কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে আমরা কিভাবে উত্তোরণ ঘটাতে পারি সে বিষয়ে প্যানেল আইনজীবীদের মূলবান মতামত একান্ত কাম্য।
প্যানেল আইনজীবীবৃন্দ বলেন, নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রদত্ত বিভিন্ন সুপারিশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৃহীত হচ্ছে। এই গ্রহণযোগ্যতাকে কিভাবে অব্যাহত রাখা যায় সে বিষয়টি এখন বিবেচনায় নেয়া জরুরি। মাননীয় বিচারপতি নাঈমা হায়দারকে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আমন্ত্রণ করা হলে নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রমে তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির একটা নির্ভরযোগ্য স্থান। তবে প্রতিনিয়ত এই প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আঘাত আসছে। সম্মিলিতভাবে এই সংকট থেকে উত্তোরণে কাজ করতে হবে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি স্তরে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবসহ যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেই সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করার অঙ্গীকার নিয়ে এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্যানেল আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. এস এম এ সবুর, অ্যাড. আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্ট্রার এ কে রাশেদুল হক, অ্যাড. হাসেম রাজা স্বপন, অ্যাড. সোহেল আহমেদ, অ্যাড. প্রশান্ত কুমার কর্মকার, অ্যাড, নূর উদ্দিন ও অ্যাড. সোহানা আক্তার। অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, অ্যাড. হাছিনা পারভীন, অ্যাড. দিপ্তী সিকদার, অ্যাড. রামলাল রাহা এবং অ্যাড. ফাতেমা খাতুন।
উক্ত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা এবং প্যানেল আইনজীবীসহ ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা।