চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষ করার পর আফ্রিকার অনেক সংবাদমাধ্যম বলেছে যে- ‘চীন ও আফ্রিকার মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক এবং জয়-জয় অংশীদারিত্ব গভীরভাবে বিকাশের প্রত্যাশা রয়েছে’, ‘আফ্রিকার নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন’, ‘চীন আফ্রিকান দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে।’
চীনা কূটনীতির সঙ্গে পরিচিত সবাই জানেন যে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতি বছরের শুরুতে আফ্রিকা সফর করেন। এই ঐতিহ্য গত ৩৫ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেছিলেন যে, কূটনৈতিক সম্পর্কযুক্ত সব আফ্রিকান দেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কের স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। দু’পক্ষের সামগ্রিক অবস্থানকে নতুন যুগে ‘সার্বক্ষণিক অভিন্ন কল্যাণের চীন-আফ্রিকা কমিউনিটির সম্পর্কে’ উন্নীত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে, চীন প্রস্তাব করেছে যে, চীন ও আফ্রিকা ‘ছয়টি আধুনিকীকরণ’ তৈরি করা এবং ‘দশটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ’ বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।
বহির্বিশ্ব লক্ষ্য করেছে যে, গভীর যোগাযোগের মাধ্যমে, চীন ও আফ্রিকা আগামী তিন বছরে ‘চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম’ উন্নয়নের জন্য একটি ‘সময়সূচী’ এবং একটি ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, চারটি আফ্রিকান দেশের নেতা আফ্রিকার উন্নয়নে চীনা সমর্থনের প্রশংসা করেন এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য নতুন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
উদাহরণস্বরূপ, নামিবিয়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য, কৃষি, অবকাঠামো, জ্বালানি সম্পদ এবং অন্যান্য খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। চাদ আরও চীনা কোম্পানিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানায় এবং আশা করে যে, তাদের উচ্চমানের কৃষিপণ্য চীনা বাজারে প্রবেশ করবে। প্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ এবং কৃষি, শিল্পায়ন ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের সহায়তা প্রত্যাশা করে। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট চীনের সঙ্গে সহযোগিতা সমন্বয় ও প্রচারের জন্য নাইজেরিয়া-চীন ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের মহাপরিচালককে বিশেষ নিয়োগ দিয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন বর্তমানে আফ্রিকান দেশগুলির প্রধান উদ্বেগ। আফ্রিকার প্রতি চীনের ‘দশটি অংশীদারিত্ব উদ্যোগের’ মধ্যে ছয়টি উন্নয়ন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। আফ্রিকা সফরের সময়, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও আফ্রিকার সঙ্গে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন খাতে সহযোগিতার উপর জোর দেন। উদাহরণস্বরূপ, চীন প্রস্তাব করেছে যে, তারা আফ্রিকানদের আফ্রিকান পদ্ধতিতে তাদের সমস্যা সমাধানে দৃঢ় সমর্থন দেবে এবং আফ্রিকার দেশগুলিকে নিরাপত্তাহীনতার অবস্থা দূর করতে সাহায্য করার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে। চীন তাদের নিজ নিজ শক্তিকে কাজে লাগাতে এবং ক্রমাগত নতুন নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র যেমন পরিচ্ছন্ন শক্তি, সবুজ খনিজ পদার্থ-সহ নানা খাতে প্রাসঙ্গিক দেশগুলির সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। আফ্রিকাকে একটি সবুজ এবং কম কার্বন-মুক্ত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে চীন।
আফ্রিকান প্রবাদে আছে, ‘প্রকৃত বন্ধু তারাই যারা একই পথ অনুসরণ করে।’ গত ২৫ বছরে, চীন আফ্রিকায় ১ লাখ কিলোমিটার রাস্তা, ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি রেলপথ, প্রায় এক হাজার সেতু এবং প্রায় ১০০টি বন্দর নির্মাণে সহায়তা করেছে। যার ফলে, আফ্রিকায় বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরণের সহায়তা আফ্রিকান জনগণকে উপকৃত করেছে। আজ, আধুনিকীকরণের যাত্রায়, চীন ও আফ্রিকাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভালো অংশীদার হয়েছে।
সূত্র: স্বর্ণা-তৌহিদ-ইয়ু,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।