মশিউর আনন্দ:২৮ মে ২০২৩ তারিখ দুপুরে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবনে গরম মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীগণের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধি, ক্যাবের প্রতিনিধি, স্বপ্ন মীনাবাজারসহ বিভিন্ন সুপারশপ প্রতিনিধি, নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভাটি আধিদপ্তরের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে গরম মসলার সরবরাহ ও মূল্য যেন স্থিতিশীল থাকে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় বিভিন্ন ধরনের মসলার মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করা, বিক্রয় রশিদ না দেওয়া কিংবা দিলেও কার্বন কপি সংরক্ষণ না করা, আমদানি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না থাকা, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকা, খাদ্যপণ্য আকর্ষনীয় করতে মসলার সাথে ফুডগ্রেড রঙের পরিবর্তে শিল্পে ব্যবহৃত রং (টেক্সটাইল কালার) ব্যবহার করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। তিনি জানান সেখানে চায়না আদা মার্কেটে তেমন নেই আর বার্মিজ ও ইন্ডিয়ান আদা ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে যা খুচরা বাজারে ২২০-২৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহার জন্য পর্যাপ্ত মসলার মজুদ রয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান জানান আদা-জিরাসহ আমদানিকৃত মসলার আমদানি মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যে বেশ অসঙ্গতি রয়েছে যা অধিকতর পর্যালোচনার প্রয়োজন।
নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, শাহ আলী মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাড়া-মহল্লার দোকানে মসলার বাজারে পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা নেই যা সামগ্রীকভাবে মসলার বাজারে প্রভাব ফেলছে। তাদের মতে পোর্টে মসলা খালাসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় লাগে যা মসলার মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও তারা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীগণ খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্রয় রশিদ প্রদান করছেন না। এক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীগণ পাইকারী বাজার কঠোরভাবে তদারকির অনুরোধ জানান।
সভায় ক্যাবের প্রতিনিধি বলেন, মসলার খুচরা ও পাইকারী বাজারে মূল্যের অসঙ্গতি রয়েছে। এছাড়াও সুপার শপ গুলোতে দেখা যায়, তাঁরা পাইকারী বাজার থেকে মসলা সংগ্রহ না করে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে সংগ্রহ করছে। এতে একাধিক হাত বদলের মাধ্যমে মসলার মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের আদা, চায়না আদা নামে বিক্রির মাধ্যমে ভোক্তাদের প্রতারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অধিদপ্তরকে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
আলোচনায় অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের বা বার্মিজ বা ইন্ডিয়ান আদা, চায়না আদা নামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা অভিযানে খতিয়ে দেখা হবে। আসন্ন ঈদে মসলার বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে। কেউ মসলার অবৈধ মজুদের সাথে জড়িত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সভায় মহাপরিচালক বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আজকের এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সমিতি বা বাজার কমিটিকে এ ক্ষেত্রে মসলার বাজারে শৃঙ্খলা আনাসহ সামগ্রীকভাবে মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সমিতি বা কমিটি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে অধিদপ্তর কমিটি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, মসলার আমদানিকারক এলসিতে যদি মসলার প্রকৃত মূল্য কমিয়ে প্রদর্শন করে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে। সুন্দর মোড়কের নামে মসলার মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সেটাও তদারকি করা হবে। তিনি ব্যবসায়ীগণকে সকল আইন মেনে ব্যবসা করা, সঠিক মূল্যে ভোক্তাদের নিকট পণ্য বিক্রয় করা, ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার দোকানে সংরক্ষণ করা ও পণ্যে ভেজাল না মেশানোর বিষয়ে আহবান জানান। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পোর্টে মসলা খালাসের ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়ে আমাদের অবহিত করলে তা সমাধানের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগামীকাল থেকে অধিদপ্তর কর্তৃক সারাদেশ ব্যাপি মসলার বাজার নিবিড় ভাবে মনিটরিং করা হবে এবং আমরা এক সপ্তাহ সেটা নজরদারিতে রাখব। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে এবং আমাদের মনিটরিং এর প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয় করে একটি প্রতিবেদন সরকারের নিকট তুলে ধরা হবে।
তিনি সভা শেষে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে বাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তাঁদের নিউজের জন্য বাজার যেন অস্থির না হয় সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
আলোচনা শেষে মহাপরিচালক আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে মসলাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় এবং সরবরাহ যেন স্থিতিশীল রাখতে সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।