আব্বাছ হোসেন:
ঋণ দেওয়ার কথা বলে লক্ষ্মীপুর সদরে ৩ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি ভুয়া এনজিও। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আজ রোববার টাকা ফেরত পেতে শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লামচরী গ্রামে সংস্থার কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন গ্রাহকেরা।
এ সময় তারা অভিযোগ করেন, সদর উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সংস্থাটি। কোনো রশিদ ছাড়া শুধুমাত্র ভিজিটিং কার্ড দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে সংস্থার লোকেরা।
পরে ১ ফেব্রুয়ারি একটি ভাড়া বাসা নিয়ে সংস্থার অফিস করেন জনৈক আব্দুল আসাদ রাসেলসহ কয়েকজন ব্যক্তি। গ্রাহকদের আজ (রোববার) টাকা দেওয়ার কথা বলে এর আগেই লাপাত্তা তারা। ভিজিটিং কার্ডে দেওয়া নম্বর এবং বাসার মালিকের নম্বরও বন্ধ রয়েছে বলে জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফ উদ্দিন আনোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রাহকদের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। অফিসটি তালাবদ্ধ থাকায় অফিসের ভেতরে ঢুকতে পারিনি।’
ভুক্তভোগী সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের রোকেয়া বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে। স্বামী ১০ বছর ধরে অসুস্থ। ঘর না থাকায় মেয়ে বিয়ে দিতে পারছি না। ঘর করার জন্য তিন লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে আমার থেকে ২৩ হাজার টাকা সঞ্চয় নেয়। ধার দেনা করে আমি এই টাকা দিয়েছি। এখন আমি কি করব। আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল্যাহ বলেন, ‘১২ জনের গ্রুপ থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। কথা ছিল, রোববার ১২ লাখ টাকা ঋণ দেবে। এখন তারা পালিয়ে গেছে।’ তিনি এখন কি করবেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সদর উপজেলার লাহার কান্দি গ্রামের বদর আলী, আবু জাহের, মর্জিনা, বিলকিছ, চররুহিতা গ্রামের হুমায়ূন কবির, খোরশেদ আলম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন তাদের টাকা উদ্ধারে যেন ব্যবস্থা নেন।’
আরেক ভুক্তভোগী ওই অফিসের ঝাড়ুদার সুমী বলেন, তার কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়ে সদস্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে সাত হাজার টাকা মাসিক বেতনে অফিসে ঝাড়ুদারের চাকরি দেওয়া হয়। এখন তার সঞ্চিত টাকা ও বেতন কোনোটাই নেই।
এ বিষয়ে জানতে বাড়ির মালিক ছুট্টোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন তা প্রতিবেশীরা জানাতে পারেনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগই ভুয়া। এটার কোনো রেজিস্ট্রেশন ছিল কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার যে প্রতারক চক্র রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। এসব প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’