চীন হচ্ছে এমন একটি দেশ যেখানে জনগণই দেশের কর্তা। এখানে জনগণকেন্দ্রিক শাসনের ধারণা এবং এমন একটি নেতৃত্ব রয়েছে যা জনগণের মঙ্গল করতে ও ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে পারে।
“উচ্চগতির রেল, চালকবিহীন ট্যাক্সি, ডিজিটাল পেমেন্ট চীনে এমন অনেক নতুন প্রযুক্তি রয়েছে, যা আমাকে চমকে দিয়েছে।”
“২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমা দেশগুলো যে-ধরনের উন্নয়ন করতে পেরেছে, চীন সে-ধরনের উন্নয়ন করেছে মাত্র ৪০ বছরে। চীনের কিছু এলাকা তো পশ্চিমের চেয়েও বেশি আধুনিক।”
“আধুনিকীকরণ একটি অর্জন এবং দায়িত্বও বটে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, আধুনিকীকরণের ফলাফলগুলো টেকসই হবে এবং ক্রমাগত উন্নত ও শক্তিশালী হবে, যাতে আমরা আরও বেশি দেশকে প্রভাবিত করতে পারি ও আরও বেশি লোকের উপকার করতে পারি।”
‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং চায়না’ বা ‘চীনকে বোঝা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য কুয়াংচৌতে আসা আসিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিরা চায়না মিডিয়া গ্রুপের এশিয়া-আফ্রিকা কেন্দ্রের সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে চীন সম্পর্কে তাদের ধারণা এবং চীনা শৈলীর আধুনিকায়ন বিষয়ে তাদের মতামত এভাবে শেয়ার করেছেন।
সম্মেলন মূল প্রতিপাদ্য: “শেষ পর্যন্ত সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া: চীনা শৈলীর আধুনিকায়ন এবং বিশ্বের উন্নয়নের জন্য নতুন সুযোগ”। সম্মেলন চলবে ৩ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে, ‘আধুনিকীকরণের চেহারা’ শিরোনামের একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, যাতে চীনা ও বিদেশী পণ্ডিতরা অংশগ্রহণ করবেন। আসিয়ানের পাঁচটি দেশের ইন্টারনেট প্রভাবশালীরা ‘আধুনিকতা কেমন হওয়া উচিত?’ প্রশ্নে সিএমজি-র সাংবাদিকদের সাথে তাদের মতামত শেয়ার করেন।
লাও ন্যাশনাল রেডিওর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর সাংখানে চৌমখামফান
লাও ন্যাশনাল রেডিওর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর সাংখানে চৌমখামফান চীনে ৫ বছর কাজ করেছেন। তিনি চীনের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে মুগ্ধ হয়ে বলেন, “২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমা দেশগুলো যে-ধরনের উন্নয়ন করেছে, চীন সে-ধরনের উন্নয়ন করতে মাত্র ৪০ বছর সময় নিয়েছে। এখন তো কিছু এলাকা পশ্চিমের চেয়েও বেশি আধুনিক। এটি প্রমাণ করে যে, চীন ও চীনা জনগণ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সঠিক পথ বেছে নিয়েছে। আমি এরও প্রশংসা করি যে, চীন তার উন্নয়নের সময় পরিবেশ রক্ষা করতে ভুলে যায়নি এবং বিশ্বজুড়ে খুব সক্রিয় ছিল।”
মালয়েশিয়ান অ্যাঙ্কর ইসা জুবির
মালয়েশিয়ান ইসা জুবিরের অনলাইন নাম “গাজর”। চীনের উন্নয়নের গতি, মাত্রা ও গভীরতা দেখে তিনি গভীরভাবে চমকিত হয়েছেন। তিনি বলেন, “চীন একটি উৎপাদনকেন্দ্র থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থ ও কূটনীতির নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। চীনের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা ও প্রশংসা রয়েছে। চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমি দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের জন্য উন্মুখ।”
মিয়ানমার ভ্রমণ ব্লগার আং দিহা মিয়ানমারের ভ্রমণ ব্লগার আং থিহা অনেক দেশে গেছেন। তিনি বলেন, “কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকটি জায়গায় আমি নিরাপদ ও আধুনিক বোধ করতে পারি এবং চীন তাদের মধ্যে একটি। উচ্চগতির রেল, চালকবিহীন ট্যাক্সি, ডিজিটাল পেমেন্টের মতো অনেকগুলো নতুন প্রযুক্তি আছে, যা আমাকে চমকে দিয়েছে। বিশ্বের সেরা বৈদ্যুতিক গাড়ি চীন থেকে আসে।”
থাইল্যান্ডের বোরেন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ কমিউনিকেশনের শিক্ষক আর্নন বুয়াফা
আর্নন বুয়াফা থাইল্যান্ডের বোরেন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ কমিউনিকেশনের ডিজিটাল বিষয়বস্তু ও মিডিয়া সৃজনশীলতা বিভাগের একজন শিক্ষক। তিনি চীনা শৈলীর আধুনিকায়নে গভীরভাবে মুগ্ধ। তিনি বলেন, “আধুনিকীকরণের সুফল অবশ্যই সকল মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে হবে। ডিজিটাল যুগের প্রযুক্তি ও মিডিয়া উন্নয়নের দিকটির সাথেও একে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই সমাজের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে হবে এবং দক্ষ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিস্তৃত সামাজিক কভারেজ অর্জন করতে হবে। আমরা গোটা সামাজিক গোষ্ঠীর জন্য ডিজিটাল সামগ্রীর বিকাশ করতে পারি, সেটা থাই বিষয়বস্তু বা বহুভাষিক বিষয়বস্তু হোক, সমাজের বিভিন্ন মহল ও গোষ্ঠীর মানুষের সম্পদে সমান অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে হবে।”
ফিলিপিন্সের ভিডিও ব্লগার জোই ক্যাপিসুন্দা ফিলিপিন্সে চীনা উদ্যোক্তাদের সহায়তায় তাঁর কলেজের অধ্যয়ন শেষ করেছেন। তিনি বহুবার চীন সফর করেছেন এবং চীনের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের সাক্ষী। তিনি বলেন, “আমি উদ্যোক্তাদের এবং নতুন স্টারটারদের চীন সরকারের সহায়তা প্রদান করতে এবং উদ্যোক্তাদের বৃদ্ধির জন্য প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে দেখেছি। আমি আরো প্রত্যক্ষ করেছি, কীভাবে চীনা জনগণ দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একসাথে কাজ করেছে।” চীনা নির্মাণের অলৌকিক ঘটনা, যা তাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছিল, তিনি সাংবাদিকদের কাছে তা প্রকাশ করেন এভাবে: “চীন উঁচু উঁচু পাহাড়ে এতোগুলো সেতু তৈরি করতে পারে। তারা কীভাবে এটি করল!”
ক্যাপিসুন্দা বিশ্বাস করেন যে, চীন তার চোখে আধুনিকীকরণের দৃষ্টান্তস্বরূপ: “এটি এমন একটি দেশ, যেখানে জনগণই দেশের কর্তা। মানুষ এখানে জন্মগ্রহণ করে এবং তাদের নিজেদের জীবন কেমন হবে, তাও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখানে, দেশ পরিচালনায় একটি জনমুখী ধারণা রয়েছে, যা জনগণের মঙ্গল ও ভবিষ্যত রক্ষা করে।”
তিনি বলেন: “আধুনিকীকরণ একটি অর্জন ও একটি দায়িত্বও বটে। আমাদের এটি বজায় রাখা এবং আধুনিকীকরণের প্রচারে নৈতিকতা ও নিয়ম মেনে চলার দায়িত্ব রয়েছে। একই সময়ে, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, আধুনিকীকরণের সুফল টেকসই ও ক্রমাগত উন্নত হবে এবং শক্তিশালী হবে, যাতে আমরা আরও বেশি দেশকে প্রভাবিত করতে পারি এবং আরও বেশি লোকের উপকার করতে পারি।”
সূত্র: স্বর্ণা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।