অনুবাদ: ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা:
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১৫ মার্চ বেইজিংয়ে সিপিসি এবং বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপে যোগ দেন এবং “একসঙ্গে আধুনিকীকরণের পথে চলা” শিরোনামে একটি মূল বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, সিপিসি সবসময়ই অন্যান্য দেশের জনগণের ভাগ্যের সাথে তার নিজের ভাগ্যকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত রাখবে, চীনা-শৈলীর আধুনিকায়নে নতুন সাফল্যের সাথে বিশ্ব উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করবে, এবং মানুষের আধুনিকীকরণের পথ অন্বেষণ করার জন্য নতুন সহায়তা প্রদান করবে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, আজকের বিশ্বে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সঙ্কট একে অপরের সাথে জড়িত, বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা কঠিন, উন্নয়নের ব্যবধান ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি ঘটছে, শীতল যুদ্ধের মানসিকতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, এবং মানবসমাজের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া আবারও ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি পাঁচ-দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, “আমাদেরকে জনগণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ধারণা মেনে নিয়ে, আধুনিকীকরণে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে হবে; আমাদেরকে অবশ্যই স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার নীতি ধরে রেখে, আধুনিকীকরণের রাস্তার বৈচিত্র্য অন্বেষণ করতে হবে; আমাদেরকে অবশ্যই সততা ও উদ্ভাবনের চেতনা প্রতিষ্ঠা করে, আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে; আমাদেরতে অবশ্যই ‘নিজে দাঁড়াতে চাইলে অন্যদের আগে দাঁড়াতে দিতে হবে’- এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে, আধুনিকীকরণের কল্যাণ ছড়িয়ে দিতে হবে; এবং আমাদেরকে অবশ্যই একটি জোরালো মনোভাব বজায় রেখে, আধুনিকীকরণে নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।”
সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, আধুনিকীকরণ বাস্তবায়ন করা একটি স্বপ্ন, যা চীনা জনগণ আধুনিক যুগ থেকে চেষ্টা করে আসছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ১০০ বছরেরও পুরাতন। এই সময়কালে চীনা জনগণকে জাতীয় পুনর্জাগরণের জন্য একত্রিত করা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ইতিহাসও আধুনিকীকরণের রাস্তার ক্রমাগত অনুসন্ধানের ইতিহাস। কয়েক প্রজন্মের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার পর, আমরা চীনা শৈলীর আধুনিকীকরণের পথ খুঁজে পেয়েছি।
“চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণ শুধুমাত্র তার নিজস্ব জাতীয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে নয় সামনে এগোয় না, বরং অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকেও প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে। এটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী নয়, আধুনিক সভ্যতাকেও একীভূত করে। এটি কেবল চীনা জনগণের জন্যই কল্যাণকর নয়, বরং বিশ্বের সাধারণ উন্নয়ন এবং মহান সম্প্রীতির একমাত্র উপায়।”
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি উচ্চমানের উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি নতুন উন্নয়নকাঠামো নির্মাণকাজকে ত্বরান্বিত করব, উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ চালিয়ে যাবো, এবং বাজারে প্রবেশের বিধি শিথিল করে যাবো।
সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার বজায় রাখতে এবং বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণ ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনের পুরানো পথ অনুসরণ করে না, বা কোটো শক্তিশালী দেশের আধিপত্যবাদের আঁকাবাঁকা পথ অনুসরণ করে না, বরং বিশ্বের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের সঠিক পথ অনুসরণ করে যাবে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সভ্যতার মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষার প্রচার এবং মানবসভ্যতার অগ্রগতি প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আজকের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যসূচক আধুনিকীকরণের পথ রয়েছে, যা সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। আজ, যখন সমস্ত দেশের ভবিষ্যত এবং ভাগ্য নিবিড়ভাবে জড়িত, তখন বিভিন্ন সভ্যতার অন্তর্ভুক্তিমূলক সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শিক্ষা মানবসমাজের আধুনিকীকরণকে উন্নত করতে এবং বিশ্বের সভ্যতার বাগানকে সমৃদ্ধ করতে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই লক্ষ্যে, সি চিন পিং বিশ্বসভ্যতা উদ্যোগকে সামনে রেখেছেন।
“আমাদের উচিত বিশ্বের সভ্যতার বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কথা বলা; বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সমতা বিধান করা; পারস্পরিক শিক্ষা, ভাববিনিময় ও সহনশীলতার উপর জোর দেওয়া। সভ্যতার মধ্যে বাধা ও দ্বন্দ্ব অতিক্রম করার জন্য আদান-প্রদান ও পারস্পরিক শিক্ষা জোরদার করা উচিত। সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্বকে অতিক্রম করার জন্য সভ্যতার মধ্যে সহনশীলতা অনুসরণ করা উচিত। মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ, যেমন শান্তি, উন্নয়ন, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা সব দেশের মানুষের অভিন্ন সাধনা। আমাদের যৌথভাবে সভ্যতার উত্তরাধিকার এবং উদ্ভাবনের গুরুত্বকে সমর্থন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সহযোগিতা জোরদার করা, একটি বিশ্ব সভ্যতার সংলাপ এবং সহযোগিতা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা এবং যৌথভাবে মানব সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতির প্রচার করা উচিত।
সি চিন পিং বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদান-প্রদান ও সহযোগিতা জোরদার করতে এবং বিশ্বকে হাতে হাত রেখে চলতে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সাথে গভীর আদান-প্রদান করতে ইচ্ছুক, যাতে নতুন ধরনের রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক স্থাপন করা যায় এবং নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপের প্রতিপাদ্য ছিল: “আধুনিকীকরণের রাস্তা: রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব”। ১৫০টিরও বেশি দেশের ৫০০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা সম্মেলনে অংশ নেন।
সূত্র:চায়না মিডিয়া গ্রুপ।