১৩ই জানুয়ারি বেইজিংয়ে গণ-মহাভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র গ্রেনাডার প্রধানমন্ত্রী ডিকন মিচেল।
জনাব মিচেল সিচাংয়ের তিংরিতে ভূমিকম্পের জন্য চীন সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। সি চিন পিং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন যে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের উঁচু অঞ্চলে ভূমিকম্পটি ঘটেছে। চীন সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও অস্থায়ী পুনর্বাসন সম্পন্ন করেছে এবং সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে পুনর্গঠনও করবে। ভূমিকম্পের ত্রাণ কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে চীন সরকার সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী।
সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন-গ্রেনাডা সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে বিকশিত হয়েছে। উভয় পক্ষ একে অপরকে সম্মান করেছে এবং একে অপরের সাথে সমতাসম্পন্ন আচরণ করেছে, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা ক্রমাগত সুসংহত হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ক্রমশ গভীর হয়েছে। গ্রেনাডার সঙ্গে দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয় জোরদার করতে, চীন-গ্রেনাডা সহযোগিতায় আরও সাফল্য অর্জন করতে এবং দু’দেশের জনগণের জন্য আরো কল্যাণ সৃষ্টি করতে চায় চীন।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন যে, চীন-গ্রেনাডা সম্পর্ক বজায় রাখা এবং উন্নত করা দুই দেশ ও জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দু’পক্ষের উচিত কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর থেকে গত ২০ বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সফল অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ করা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদী ও উচ্চ-স্তরের উন্নয়নের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা। চীন গ্রেনাডার জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথ স্বাধীনভাবে অন্বেষণে সমর্থন করে এবং গ্রেনাডার সঙ্গে দেশ শাসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় জোরদার করতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক। চীনের উন্নয়ন গ্রেনাডাসহ সব দেশে নতুন উন্নয়নের সুযোগ এনে দেবে। চীন দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কাঠামোর মধ্যে গ্রেনাডার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করতে এবং নতুন জ্বালানি, সবুজ এবং কম কার্বন ও ডিজিটাল অর্থনীতি খাতে সহযোগিতার নতুন সাফল্য অর্জন করতে ইচ্ছুক। জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমনের ক্ষেত্রে গ্রেনাডার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে চীন সমর্থন করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ছোট দ্বীপ দেশগুলির উদ্বেগ ও দাবির প্রতি মনোযোগ দিতে আন্তর্জাতিক সমাজকে উৎসাহিত করতে ইচ্ছুক।
উভয় পক্ষের উচিৎ কর্মী বিনিময় জোরদার করা, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও পর্যটনের মতো ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও জোরদার করা। চীন একটি সমান ও সুশৃঙ্খল বহুমেরুর বিশ্ব এবং সবার জন্য কল্যাণকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের পক্ষে। চীন গ্রেনাডার সাথে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ, বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সভ্যতার উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করতে এবং মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন প্রচার করতে চায়।
সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, চীন সর্বদা ক্যারিবিয়ান দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ককে অনেক গুরুত্ব দেয় এবং এ অঞ্চলের দেশগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য সহায়তা প্রদান করতে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে ইচ্ছুক।
গত বছরের জুলাই মাসে গ্রেনাডায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর চীনের সময়োপযোগী সহায়তার জন্য মিচেল ধন্যবাদ জানান। মিচেল বলেন যে, গত ২০ বছর ধরে গ্রেনাডা-চীন সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। গ্রেনাডা দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে। চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডের অখণ্ডতাকে সম্মান করে। গ্রেনাডা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং চীনের সাথে সহযোগিতা আরো জোরদার করতে চায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শন মেনে চলে, চীনকে মহান উন্নয়ন সাফল্য অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। গ্রেনাডা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে ইচ্ছুক। চীন ‘গ্লোবাল সাউথের’ নেতা। চীন সর্বদা ছোট-বড় সব দেশের সমতার উপর জোর দিয়েছে এবং সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতাকে সম্মান করেছে। আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীন তার কথা ও কর্মে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে এবং ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রেনাডা চীনের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে, তিনটি প্রধান বৈশ্বিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইচ্ছুক। এসময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: স্বর্ণা-তৌহিদ-ইয়ু,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।