৪ নভেম্বর উত্তর চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তংফেং ল্যান্ডিং সাইটটিতে সফলভাবে অবতরণ করেছেন এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন শেনচৌ-১৯ মিশনের মহাকাশচারীরা।
এর কয়েকদিন আগে চীনের শেনচৌ-১৯ মনুষ্যবাহী মহাকাশযান ৩০ অক্টোবর সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মাধ্যমে গত শতাব্দির ৯০’র দশকে জন্ম নেয়া ২ চীনা মহাকাশচারী মিশনে গেলেন।
৩০ অক্টোবর ভোর চারটা ২৭ মিনিটে, শেনচৌ-১৯ মনুষ্যবাহী মহাকাশযান বহনকারী লং মার্চ-২ রকেট চিউছুয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে যাত্রা করে। প্রায় দশ মিনিট পরে শেনচৌ-১৯ মনুষ্যবাহী মহাকাশযানটি রকেট থেকে সফলভাবে পৃথক হয় এবং পূর্বনির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে। মহাকাশযানের ৩ ক্রু ভাল অবস্থায় ছিলেন এবং উৎক্ষেপণটি সম্পূর্ণ সফল হয়েছে।
শেনচৌ-১৯ মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের ৩ ক্রু হলেন ছাই স্যু জে, সোং লিং তোং এবং ওয়াং হাও জে। তাদের মধ্যে, সোং লিং তোং এবং ওয়াং হাও জে’র জন্ম গত শতাব্দির ৯০’র দশকে। এ ছাড়া ওয়াং হাও জে প্রথম চীনা নারী মহাকাশ প্রকৌশলী হিসেবে মহাকাশে গেছেন।
শেনচৌ-১৯’র মহাকাশচারীরা শেন-চৌ ১৮’র ক্রুদের সাথে কক্ষপথে পরিক্রমণ করেন। স্পেস স্টেশনে থাকাকালে শেনচৌ-১৯’র ক্রুরা একাধিক বহির্মুখী ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করবেন এবং মৌলিক মাইক্রোগ্রাভিটি পদার্থবিদ্যা, স্পেস ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, স্পেস লাইফ সায়েন্সসহ বিভিন্ন মিশনে কাজ করবেন।
চীনের মহাকাশ মিশন শেনচৌ ১৮‘র মহাকাশচারীরা নবাগত শেনচৌ-১৯ ক্রুদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তাদের কাছে থিয়ানকং মহাকাশ স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন।
মহাকাশ অনুসন্ধানে চীন কতদূরে এগিয়েছে?
মহাকাশের অনুসন্ধানে চীন কখনই থেমে যায়নি। বেইতৌ ন্যাভিগেশন উপগ্রহ এখন বিভিন্ন খাতে প্রয়োগ করা হচ্ছে, মানুষের জীবনকে আরো সহজতর করছে। ছাংএ্য-৫ চাঁদ অনুসন্ধান মিশন চাঁদ থেকে চাঁদের মাটি সংগ্রহ করে এনেছে। মঙ্গল অনুসন্ধানে গেছে চীনের ‘থিয়ান ওয়েন এক’। মহাকাশে চীনের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন আছে।
একসঙ্গে চীনের চাঁদে অনুসন্ধানের যাত্রা দেখবো। চলতি বছরের ৩ মে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ হাইনানের ওয়ানছাং কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে ছাংএ্য-৬ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়। ২ জুন এটি চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে। প্রথমবারের মতো চাঁদের দূরবর্তী দিকের নমুনা সংগ্রহ করে ৪ জুন মহাকাশযানটি পৃথিবীতে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
চাঁদের পৃষ্ঠ খনন করার জন্য একটি ড্রিল ও রোবোটিক হাত ব্যবহার করে সেখানকার শিলা এবং মাটি সংগ্রহ করতে পেরেছে মহাকাশযানটি। ঐতিহাসিক মিশনের কাজ শেষ করার পর একটি চীনা জাতীয় পতাকাও চাঁদের মাটিতে গেঁথে দিয়ে আসে ছাংএ্য-৬।
ছাংএ্য-৬ চীনের দ্বিতীয় নভোযান, যা চাঁদের অন্ধকার অংশে অবতরণ করেছে। এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে চীন ছাংএ্য-৪ চাঁদের অন্ধকার দিকে ল্যান্ডারযুক্ত রোভার পাঠিয়েছিল। ছাংএ্য-৬ তিন দিন ধরে ২ কেজি বা ৪ দশমিক ৪ পাউন্ড নমুনা সংগ্রহ করে। এসব নমুনার মধ্যে রয়েছে চাঁদের মাটি, বালু ও পাথর। চীনের চাঁদ গবেষণার মিশনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে চৈনিক চন্দ্রদেবী ছাংএ্য-এর নামানুসারে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি ক্রু মিশন পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে, এর অংশ হিসেবে চন্দ্র পৃষ্ঠে একটি ঘাঁটি তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে।
বহু বছর ধরে মঙ্গল অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে মানবজাতি। মঙ্গল হল চাঁদের পর মানুষের সবচেয়ে বেশি নজর রাখা গ্রহ। ২০ শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে মানবজাতি মোট ৪৫ বার মঙ্গল অনুসন্ধান মিশন চালিয়েছে।
২০২০ সালে চীনের প্রথম মঙ্গল অনুসন্ধানকারী থিয়ানওয়েন ১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। ৭ মাস, মোট ২০২ দিন, ৪৭.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার ভ্রমণের পর থিয়ান ওয়েন ১ ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলে পৌঁছায়। চীন হল মঙ্গলে অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট পাঠানো দ্বিতীয় দেশ।
চীনের ‘মহাকাশ স্বপ্ন’ এর পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অধীনে উচ্চ গতি পেয়েছে। গত এক দশকে বেইজিং মহাকাশ কর্মসূচিতে বিপুল সম্পদ ঢেলে দিয়েছে। মহাকাশ চেতনা যেন আকাশের তারার মত বংশের পর বংশ ধরে চীনাদেরকে মহাকাশের স্বপ্ন পূরণে উৎসাহ দিচ্ছে।
সূত্র:লিলি-হাশিম-স্বর্ণা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।