কনক মজুমদার:
ওরা তক্কে তক্কে থাকে কখন রাত নামবে। রাত নামার সাথে সাথে একযোগে শত শত পিকআপ ও নিষিদ্ধ দানবীয় চাকার ট্রলির বহর নামে রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা, সমেষপুর, রাজারামপুর-ভাদুর, আথাকরা, নোয়াগাঁও, কাঞ্চনপুর-নবীগঞ্জ, বরিয়াইশ, ইছাপুর, লামচর, চন্ডিপুরসহ বিভিন্ন ফসলি জমির মাঠে।
আগেই ফসলি জমির অজ্ঞাত স্থানে প্রস্তুত থাকে খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন)। শুরু হয় টপ সয়েল লুট। বিগত দেড় দশক ধরে চলে আসছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন মহা কর্মযজ্ঞ।
দুর থেকে মনে হবে মাদক সরবরাহের মতো নিষিদ্ধ কোন দ্রব্য আনা নেয়া করছে একটি মহল। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকে ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি। কোন ধরনের গাড়ির আলো দেখলেই থেমে যায় কোলাহল।
স্থানীয়দের অভিযোগ বিগত দিনের চেয়ে গত কয়েকমাস এ লুটতরাজ যেন মহা উৎসবে পরিনত হয়েছে। একদিকে ফসলি জমির মাটি লুট অন্যদিকে নিষিদ্ধ ট্রলির দানবীয় চাকায় ধংস হচ্ছে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত গ্রামীণ কাঁচা-আধাপাকা ও পিচঢালাই সড়ক।
এ ধরনের কাজে বাধা দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীদের। আবার ফসলি জমির মাটি লুটের ক্ষমতা নিতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও কম হয়নি বিগত দিনে। দফায় দফায় হয়েছে সংঘর্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটিখেকোরা দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করেই নির্বিচারে কৃষি জমির উপরিভাগের (টপসয়েল) মাটি কেটে উজাড় করছে। উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। চাষাবাদের জমিতে পরিনত হয়েছে শত শত পুকুর।
দেহলা গ্রামের ফারুক সালেকীন জানান, প্রথমে মাঠের একটি জমি কিনে নেয় মাটি ব্যবসায়ীরা। পরে সেখানে এমনভাবে গর্ত করা হয় পাশের জমির মালিক তার জমির মাটিও বিক্রি করতে বাধ্য হন। এভাবে চলতে থাকলে ধানের এ জমিগুলো থেকে আগামী কয়েকযুগেও ফসল উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। এসব মাটির বেশিরভাগই চলে যায় স্থানীয় ইটভাটায়।
টপসয়েল কাটার ঘটনায় ৩০ মার্চ রবিবার ঈদের নামাজ পড়ে দেহলা বিলে নামেন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত স্থানীয় লোকজন। তারা এসময় প্রতিজ্ঞা করেন, কোনভাবেই এ এলাকা থেকে কেউ মাটি কাটতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রামগঞ্জ ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে রামগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত ইটভাটা রয়েছে ১৬ টি। ৮টি ইটভাটার লাইসেন্স নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, একবার যদি কোন ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হয় তা আগামী এক শতকেও পূরন হওয়া সম্ভব নয়। এতে এই এলাকায় ধানচাষ হওয়ার সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত কমছে। মাটি কাটার ফলে শত শত পুকুরের সৃষ্টি হচ্ছে। পুকুরগুলো কারনে জলাবদ্ধতাসহ বন্যা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ফসলি জমির টপ সয়েল রক্ষায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ মোহাম্মদ রবিন শীষ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। জমির টপসয়েল লুটের সাথে সম্পৃক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।