নিজস্ব প্রতিবেদক:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা মিরাজুল ইসলাম মিরাজকে (২৬) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ১২ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছে আদালত।
সোমবার (২২ মে) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় ১১ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হত্যা মামলায় ১৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী ছিল না। এছাড়া মামলার কোনো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও ছিল না। তাই মামলার বাদী এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ১২ জন আসামির বিরুদ্ধে হত্যায় সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে সাড়ে ৯ বছর পর এ রায় দিয়েছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। অন্যদিকে মামলার বাদী নিহত ছাত্রলীগ নেতা মিরাজের বাবা আবুল কালাম তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলা ও আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজ তার বন্ধু মাসুদ ও সোহলকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে রায়পুর উপজেলার ভূইয়ারহাট বাজার থেকে রায়পুর বাজারে যাওয়ার পথে রায়পুর-মীরগঞ্জ সড়কের বজুভাটের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় দারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের তিনজনের ওপর হামলা করে। হামলায় ও দারালো অস্ত্রের আঘাতে তিনজন গুরুতর আহত হন।
মারাত্মক আহতবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাদের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক ছাত্রলীগ নেতা মিরাজকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন মিরাজের বাবা আবুল কালাম ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ১৪/১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সময় লক্ষ্মীপুরসহ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী ব্যাপক সহিংস আন্দোলন হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যা মামলায় আসামি করা হলে পরবর্তীতে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাদী ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এসময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহারও দাখিল করেন। এতে রাকিব হোসেন রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। এজাহারে ঘটনার সময় মিরাজের সঙ্গে থাকা আহত মাসুদ ও সোহেলকেও আসামি করা হয়। পরে আবারও থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখিত বিবাদীদেরও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাদী আদালতে আবেদন করেন।
২০১৫ সালের ৩১ মে হত্যা মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেন রায়পুর থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এস.আই) আব্দুল মালেক। তিনি সম্পূরক এজাহারভুক্ত আসামি রাকিব হোসেন রাজু, জহির ও মুসলিম নামে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন এবং ১৮ জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।
ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে একই বছরের ৯ জুলাই আদালতে নারাজির আবেদন করেন মামলার বাদী। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৬ সালের ৯ মে লক্ষ্মীপুর সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে মোট ২২ জন আসামির মধ্যে ১০ জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করে ১২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের সঙ্গে মিরাজের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিলো। মিরাজের কাছে তাদের (আসামিদের) ব্যবসার ৩ লাখ টাকা ছিল। ওই টাকা বন্টন নিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। পরে ঘটনার ২-৩ দিন আগে আসামিরা মামলার বাদী মিরাজের বাবা আবুল কালামের মাছের দোকানে গিয়ে হামলা করে। এসময় তারা মিরাজকে খোঁজ করে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর তিনদিনের মাথায় ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জহিরের বাড়িতে মিরাজকে ডেকে নিয়ে আসামিরা ব্যবসায়ীক কথাবার্তা বলে। পরে কৌশলে মাসুদ ও সোহেলকে পরামর্শ দিয়ে তাকে মোটরসাইকেলে করে ভূঁইয়ারহাটের দিকে নিয়ে যায়। মিরাজের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য মাসুদ ও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য আসামিরা। ভূইয়ার হাট থেকে ফেরার পথে বিকেলে কেরোয়া ইউনিয়নের ভাঁটের মসজিদের অদূরে নির্জন এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।