চীনে অনেক ছোট নগর আছে। এগুলো দেখতে সাধারণ, তবে বৈদেশিক বাণিজ্যিক শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে।
সারা বিশ্বের ২৫ শতাংশ সাঁতারের পোষাক চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের সিংছেং শহরে তৈরী হয়। প্রতিবছর সিংছেং শহর ১৯ কোটি সাঁতারের পোষাক উৎপাদন করে। ছোট সাঁতারের পোষাক একটি বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে এখানে। মাত্র ৫ লাখ মানুষের ছোট শহর আজ বিশ্বের সাঁতারের পোষাকের শহর।
গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হয়েছে। তবু, সারা চীনে এখনও গরম লাগে। লিয়াওনিং প্রদেশের সিংছেং শহরের সমুদ্রসৈকতে অনেক পর্যটক আছেন। অধিকাংশ পর্যটক সাঁতারের পোষাক এখান থেকে কিনেছেন। একটি সাঁতারের পোষাকের দোকানের মালিক চাং সং বলেন, চলতি বছর সাঁতারের পোষাক বিক্রয়ের পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে, গ্রীষ্মকালে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিংছেংয়ের তৈরী সাঁতারের পোষাক সারা চীনে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ পর্যন্ত সিংছেং শহরে সাঁতারসংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি বার্ষিক আয়সহ ১৫টি মনোনীত আকারের উপরে উদ্যোগ এবং ৫ মিলিয়ন ইউয়ানের বেশি বার্ষিক আউটপুট মূল্যসহ ৩০০টিরও বেশি বড় মাপের উদ্যোগ রয়েছে। সিংছেং শহরের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যুরোর পরিচালক হান ইয়া নান বলেন, বর্তমানে বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ইউয়ান; সারা বিশ্বের প্রতি চারটি সাঁতারের পোশাকের একটি সিংছেংয়ে উৎপাদিত হয়।
সিংছেং শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত একটি সাঁতারের পোষাক উৎপাদন কারখানায় বিদেশী বাণিজ্য আদেশের জন্য শত শত শ্রমিক একত্রে স্নায়বিক ও সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করছেন। এ প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার সুন লি শুয়াং বলেন, এখন আমার কাছে চিলি থেকে ১ লাখ সেটের একটি অর্ডার আছে। আমরা মাসের শেষ নাগাদ পণ্যের চালান দিতে কাজ করছি।
গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে সুন সাঁতারের পোষাক উৎপাদন শুরু করেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে আমাদের মাত্র চারটি যন্ত্র ছিল। পরে আমরা একটি ৪০০ বর্গমিটারের কারখানা ভাড়া করি। আস্তে আস্তে আমরা নিজস্ব একটি ৩ হাজারেরও বেশি বর্গমিটারের কারখানা নির্মাণ করেছি। বর্তমানে আমরা একটি ২০ হাজার বর্গমিটারের বাণিজ্যিক মল নির্মাণ করেছি।
সিংছেং সাঁতারের পোষাক শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান চাং তং ইউয়ান বলেন, ৩০ বছর আগে আমরা সাঁতারের পোষাক তৈরী শুরু করি। তখন আমাদের ব্যবসা এতো ভালো ছিল না। কিন্তু ই-কমার্স উন্নয়নের পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকে আমরা ইন্টারনেটে সাঁতারের পোষাক বিক্রি শুরু করি। আমরা নিজের ব্রান্ড গড়ে তুলেছি। তিনি বলেন, তখন তাঁদের বস্ত্র, আনুষাঙ্গিক জিনিস, নকশা এবং গবেষণার ঘাটতি ছিল। স্থানীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এবং শিল্প সমিতির নির্দেশনা ও সহায়তায় তাঁরা বাইরের প্রযুক্তি আয়ত্ব করেন এবং বিশিষ্ট প্রতিভাবান ব্যক্তিদের এ শিল্পের দিকে আকৃষ্ট করেন।
বর্তমানে সিংছেংয়ে একটি সম্পূর্ণ সাঁতারের পোষাক উৎপাদন চেইন গড়ে উঠেছে। ২০১৩ সাল থেকে সিংছেংয়ের অনেক সাঁতারের পোষাক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিদেশী কোম্পানির অর্জন, ফ্যাব্রিক গবেষণা ও উন্নয়ন, প্যাটার্ন নকশা, বিদেশী বাজার উন্নয়ন করার মাধ্যমে সফলভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে।
সিংছেংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ পরিচালক চাং চিয়া রুই বলেন, আমাদের পণ্যের ৫০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয় এবং বাকি ৫০ শতাংশ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়। আমাদের সাঁতারের পোষাকের নতুন নকশা ও উচ্চ মান এসব দেশের মানুষকে আকর্ষণ করে।
বর্তমানে সিংছেং ৫ লাখেরও কম জনসংখ্যার বাস। এটি একটি ছোট জেলা। তবে, এখানে ১.৬ লাখেরও বেশি মানুষ সাঁতারের পোষাকসংশ্লিষ্ট কাজ করেন। সিংছেং শহরের সাঁতারের পোষাক শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান চাং তং ইউয়ান বলেন, আমাদের বিদেশে ৩৩টি গুদাম নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে। এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি নির্মিত হয়েছে। অন্তঃদেশীয় ই-কমার্স উন্নয়নের পাশাপাশি, আমরা এক শ বিদেশী গুদাম নির্মাণ করতে চাই।
বর্তমানে সিংছেংয়ে কম্পিউটারাইজড স্বয়ংক্রিয় থ্রেড কাটিং, স্বয়ংক্রিয় স্প্রেডিং মেশিন, স্বয়ংক্রিয় কাটিং মেশিন এবং অন্যান্য উন্নত সরঞ্জাম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ সম্পর্কে চাং তং ইউয়ান বলেন, এআই প্রযুক্তি সাঁতারের পোষাক উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পৃথিবীর যেখানেই রোদ আছে, সেখানেই থাকবে সিংছেং সাঁতারের পোশাক। এটি হলো সিংছেং সরকারের উদ্দেশ্য। তরুণ-তরুণী ক্রমবর্ধমান হারে সাঁতারের পোষাক শিল্পের সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করেছে, যা আশাব্যঞ্জক।
সূত্র:ছাই-আলিম-ওয়াং হাইমান, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।