“প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তার হাতে স্মার্ট কৃষি ছড়িয়ে পড়ুক সাধারন কৃষকের মাঝে”- দেশের কৃষি, কৃষক ও বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া একটি আধুনিক কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এগ্রো-১।
এগ্রো-১ যাত্রা শুরু করে ২৮ শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতে। প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করা এগ্রো-১ এর কার্যক্রম, করোনা মহামারির শত বাধা পেরিয়ে পৌছে যায় সারা বাংলাদেশে। মাত্র ২০ শতাংশ জমি নিয়ে শুরু করা এগ্রো-১ বর্তমানে দাঁড়িয়ে আছে ৮০ বিঘা জমির উপর।
এগ্রো-১ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে তার কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে। যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট কৃষি কর্মশালা: আমাদের দেশের আদি কৃষির সাথে জড়িত সাধারণ কৃষক এবং নানান পেশার সাথে জড়িত শিক্ষিত যুবকদের স্মার্ট কৃষির প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে “প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তার হাতে স্মার্ট কৃষি ছড়িয়ে পড়ুক সাধারণ কৃষকের মাঝে” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে পথ চলা শুরু হয় স্মার্ট কৃষি কর্মশালার। ১ দিন ব্যাপী স্মার্ট ফার্মার ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এগ্রো-১ প্রতিমাসে প্রশিক্ষণ প্রদান করে প্রায় ৫০০ জন কৃষিপ্রেমি মানুষকে।
স্মার্ট কৃষিতে লক্ষপতি: কৃষি কাজ করে প্রতি মাসে লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। এই চিন্তাকে বাস্তবায়ন করতে “স্মার্ট কৃষিতে স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়ি এগ্রো-১ এর সাথে” এই শ্লোগানের সাথে এগ্রো-১ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পূর্ণ নির্দেশনা, ট্রেনিং ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা, ফলোআপ এবং লক্ষ পূরণ পর্যন্ত।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকের মাঝে নিয়ে এসেছে এগ্রো-১ সীড: উদ্যোক্তাদের উন্নত জাতের বীজ সরবরাহের উদ্দেশ্যে “প্রতিটি বীজ এক একটি স্বপ্ন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয় এগ্রো-১ সীড। যেখানে ২২ টি উচ্চ মূল্য ফসলের ৫০ টিরও অধিক জাত নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রথমে নিজেদের ক্রপ মিউজিয়ামে যাচাই বাছাই করে তারপর সেরা জাতগুলোই তুলে দেয়া হয় উদ্যোক্তাদের হাতে। গুণগত মানসম্পূর্ণ, অধিক ফলনের নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে এগ্রো-ওয়ান সীড হাইব্রিড বীজ সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করছে।
চারা উৎপাদন: এগ্রো-১ তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে সুস্থ সবল শতভাগ শিকড় যুক্ত পল নেট হাউজে কোকোপিটের মাধ্যমে সিডলিং ট্রেতে উৎপাদিত চারা সরবরাহ করে থেকে। “সুস্থ চারায় স্বপ্ন পূরণ” এই শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমানে এগ্রো-১ দেশের সর্ববৃহৎ সবজি চারা উৎপাদন এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
আধুনিক কৃষি উপকরণ সরবরাহ: “নিলে আধুনিক উপকরণের আশ্রয়, হবে অর্থের সাশ্রয়” এগ্রো-১ কোয়ালিটি সম্পূর্ণ আধুনিক কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করে চলেছে এর মাঝে অন্যতম মালচিং পেপার, রেডি কোকোপিট, সিডলিং ট্রে, শেডনেট, ইউভি পলি, পলিহাউজ উপকরণ, নেটহাউজ উপকরণ, ড্রিপ ইরিগেশন ইত্যাদি।
জৈব কৃষি উপকরণ: “ফসল চাষে সোনার মাটির, ক্ষয় হবে না আর সময় মতো ব্যবহার করলে উত্তম জৈব সার” এগ্রো-১ বিভিন্ন ধরণের জৈব উপকরণ সরবরাহ করে থাকে এর মাঝে ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, ট্রাইকোডার্মা পাউডার অন্যতম।
বালাইনাশক সরবরাহ: “নিয়ম করে স্প্রে করলে রোগ বালাই যাবে চলে” এগ্রো-ওয়ান স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তাদের কার্যকরী বালাইনাশক স্প্রে পরামর্শ প্রদান করে থাকে একই সাথে সরবরাহ করে থাকে। এগ্রো-১ বালাইনাশক এবং জৈবিক বালাইনাশক সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও আলাদা আলাদা সবজি ফসলের স্প্রে সিডিউল প্রদান করে থাকে।
ফ্রি তথ্য সেবা: এগ্রো-১ কল সেন্টার ব্যবহার করে ১ নাম্বারের মাধ্যমে সারা দেশের স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তাদের আধুনিক চাষ পদ্ধতি, স্মার্ট প্রজেক্ট প্ল্যান সংক্রান্ত ফ্রী পরামর্শ এবং তথ্য সেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়া ইউটিউব এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভিত্তিক ভিডিও প্রচার করে থাকে এবং বর্তমানে সরাসরি মাঠ পরিদর্শন করেও পরামর্শ সেবা দেওয়ার কার্যক্রম চালু হয়েছে।
পলিহাউজ তৈরি: এগ্রো-১ দেশের কৃষকের সবজি চাষের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি উপলব্ধি করে স্বল্প খরচে বাঁশ কাঠের তৈরি দেশীয় মডেলে পলিহাউজ-নেট হাউজ তৈরি করে দিচ্ছে একই সাথে পলি হাউজে সবজি চাষের পরিকল্পনা এবং সাপোর্ট প্রদান করে চলেছে।
বাজার ব্যবস্থাপনা: এগ্রো-১ দেশের কৃষকদের কথা চিন্তা করে এগ্রো-১ বাজার “www.agro1bazar.com” নামে অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে যেখানে সহজেই একজন কৃষক পাইকারি বিক্রেতার কাছে তার উৎপাদিত ফসল বিক্রয় করতে পারবেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় দেশের স্মার্ট কৃষিকে ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে বেকারদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ চালিয়ে যাবে এগ্রো-১। এছাড়াও প্রচলিত পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করা কৃষকদের কাছে আধুনিক কৃষির বার্তা পৌছে দেয়া ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মতৎপরতা বাড়ানো হবে। স্মার্ট কৃষিকে তরুনদের কাছে যুগ উপযোগী ভাবে তুলে ধরে কৃষির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং শুধুমাত্র চাকরির দিকে না ঝুকে স্মার্ট কৃষিতে ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভুদ্ধকরণ কর্মসূচী পরিচালনা করবে এগ্রো-১।
গ্রীনহাউজের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বছরব্যাপী উচ্চমূল্যের ফসল চাষে বিনিয়োগে সক্ষম ব্যাক্তিবর্গ ও শিল্পপতিদের উদ্ভুদ্ধকরণ ও সবধরনের প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তাদের সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধয়ানের জন্য নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করা ও সেটি ব্যবহার করে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা এগ্রো-১ এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্য অন্যতম বড় একটি পরিকল্পনা। এতে স্মার্ট উদ্যোক্তারা সার্বক্ষনিক সেবা গ্রহন করতে পারবেন এবং সময়মতো সবধরনের প্রজেক্ট প্ল্যান , প্রজেক্ট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিচর্যাসহ সকল কার্যক্রমের সময় উপযোগী সকল দিক নির্দেশনা স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফোনেই পেয়ে যাবে।
অফলাইনের পাশপাশি অনলাইনেও এগ্রো-১ এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে দেশ ও বিদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এগ্রো-১ এর স্মার্ট ফার্মার প্রশিক্ষণ গ্রহন করে আধুনিক কৃষিতে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবে। সর্বপোরি, এগ্রো- এর সকল পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য, সবথেকে সহজ উপায়ে সবচেয়ে কার্যকরী আধুনিক কৃষি সেবা উদ্যোক্তাদের কাছে সময়মতো পৌছে দেয়া। সনাতন কৃষিকে আধুনিক কৃষিতে রূপান্তর করতে পারলে দেশের তরুন ও যুব সমাজ কৃষিতে আগ্রহী হবে। এতে চাকরির বাজারের চাপ কমে যাবে এবং আত্মকর্মসংস্থান তৈরির হারও বেড়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবে এসব উদ্যোক্তাগণ।
এগ্রো ওয়ানের নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন,বেকার সমস্যা আমাদের দেশের অন্যতম বড় একটি সমস্যা। দেশে বেড়েই চলেছে শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা। কারণ আমাদের সমাজে চাকরি দেয়ার তুলনায় চাকরি করার প্রবণতাটাই বেশী চর্চা হয়। আধুনিক কৃষিকে ব্যবহার করে দেশের এই শিক্ষিত বেকারদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। যারা সাধারণ কৃষক নয় বরং নিজেকে পরিচয় দিবে একজন স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে। আপনি খেয়াল করে দেখেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেল আছে, তার তেল বিক্রি করে ধনী দেশ, ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো প্রযুক্তি আছে তারা প্রযুক্তি বিক্রি করে উন্নত দেশ, আমাদের দেশে আমাদের সোনার মাটি আছে, যেখানে যা ফলাবেন তাই ফলবে। তাহলে আমরা কেনো উন্নত দেশের কাতারে পৌছাতে পারি না? এটা কি সম্ভব না? আমি বিশ্বাস করি আধুনিক কৃষির সঠিক এবং কার্যকরি ব্যবহারে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই বিশ্বাস থেকেই আমি এগ্রো-১ প্রতিষ্ঠা করি। যেখানে গতানুগতিক কৃষি পেশার বাহিরে এসে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক কৃষি নির্ভর স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা। বাস্তবিক প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে এই সব উদ্যোক্তা। যারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করছে এবং অন্যদেরও কর্মসংস্থান তৈরি করছে। এগ্রো-১ আধুনিক কৃষির এই কার্যক্রম সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে বেশী বেশী আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হবে। বেকার সমস্যার দূর হওয়ার সাথে সাথে খাদ্যদ্রবে আমদানি নির্ভরতাও কমে আসবে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব হবে আমাদের কৃষি পণ্য। দেশের কৃষির পরিকল্পিত আধুনিকায়নেই গড়ে উঠবে সোনার বাংলাদেশ। আর এ লক্ষ্যেই আমি কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এগ্রো-১ নিয়ে।