নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে জাটকা রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জাটকা আহরণে জেলেদের নিরুৎসাহিত করতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আগামী ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম ও মো. তোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দীন, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গবেষকবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, নৌপুলিশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিনিধিগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, “মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাবারের একটি বড় যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। মৎস্য উৎপাদন, বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এ খাতে সম্পৃক্তদের আয়ের উৎস তৈরি হচ্ছে। এ খাতের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, বেকারত্ব দূর হচ্ছে। এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করছে। ফলে দেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণই শুধু নয়, প্রায় ৫২টি দেশে আমাদের মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বে যে তিনটি দেশ মাছ উৎপাদনে ভালো করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। অপরদিকে মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। জেলে-মৎস্যজীবীসহ মৎস্য খাতে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্তদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের মৎস্য খাতে অভাবনীয় ও বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
মন্ত্রী আরো যোগ করেন, মৎস্য খাত শুধু মাছ আহরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এ খাতের সাথে দেশের উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, খাবারের যোগান, বেকারত্ব দূর করা, উদ্যোক্তা তৈরি এসব বিষয় সম্পৃক্ত। তাই এ খাতকে কোনভাবেই হেলায় দেখা যাবে না। জাটকা নিধন বন্ধে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ রয়েছে। এর ব্যত্যয় যারাই করতে চাইবে এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া যাবে না। যারা আইন লঙ্ঘন করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা অগ্রাধিকার দেয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য মাছ রক্ষা করা।
মাছ বড় হলে মৎস্যজীবীরাই আহরণ করবেন উল্লেখ করে মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, মৎস্যজীবীরা বড় মাছ বিক্রি করে বেশি অর্থ আয় করতে পারবে। কাজেই তাদের স্বার্থেই তাদের এক্ষেত্রে আইন মানতে হবে। অসাধু কিছু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ সময়ে দরিদ্র জেলেদের মাছ আহরণে বাধ্য করে। কোন অসাধু ব্যক্তির পরামর্শ বা প্রলোভনে জাটকা আহরণে কোথাও যাওয়া যাবে না।
সভায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে কেন্দ্রীয়ভাবে ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৩-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আগামী ৩১ মার্চ পিরোজপুরে অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে এদিন বর্ণাঢ্য নৌর্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে জাটকা সংরক্ষণবিষয়ক ভিডিওচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, বেতার-টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন, ইলিশ বিষয়ক কর্মশালা, সভা-সেমিনার আয়োজন, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন মৎস্য আড়ত, বাজার ও অবতরণ কেন্দ্রে বিশেষ অভিযান ও বিশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ব্যাপারে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
উল্লেখ্য, দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে ইলিশ তথা মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন হয়ে আসছে।