আত্নদান
– জাহান সৈয়দ
——————
কণ্টক সঙ্কুল পথ পেরিয়ে ঐ দেখ উড়িয়ে ধ্বজা এলো বিজয়ের বেলা,
হারানো দিনের অজস্র ঝরা ফুল দিয়ে গেঁথেছি আমি আজ স্মৃতির মালা,
ভুলিনি আজো একাত্তুরের সেই আতঙ্ক সেই ভয়াল কালো রাত্রি,
ভীত সন্ত্রস্ত আমরা সবাই হয়েছিলেম এক অজানা পথের যাত্রী।
আকাশে গর্জে গুলির শব্দ বাতাসে বারুদের তীব্র গন্ধ,
সব টুকু আলো নিভে গিয়েছিল সে রাতে সকল দুয়ার ছিল বন্ধ।
পাক সেনাদের সেই পৈচাসিক আক্রমণে বাঙ্গালী হলো দিশেহারা,
স্বপ্নে ও ভাবেনি কি ভয়ংকর চক্রান্তের শিকার হতে চলেছে ওরা।
নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকারে হানা দিয়ে করেছে তাণ্ডব লীলা,
নিরীহ নিরস্র বাঙ্গালীর রক্ত দিয়ে উল্লাসে করেছে হোলি খেলা।
সেই অন্ধকারে জীবন মরনের মাঝে দাঁড়িয় ভুলে গেছি আমি নিঃশ্বাস নিতে,
ভুলে গেছে মা কি করে যে হয় কান্না রত শিশুটির কান্না ভোলাতে।
রক্তের নদী বয়ে গেছে সেদিন বাংলা মায়ের পদতলে,
হাহাকার করে সন্তান তার তবুও ক্রমাগত আহূতি দিয়ে চলে।
লুটিয়ে পড়ে মরনের কোলে একের পর এক বাঁচাতে মায়ের প্রান,
দেবেনা যে কিছুতেই ওরা কেড়ে নিতে আজ মায়ের সম্মান।
সে রাত এসেছিল যেন অনন্ত কালের হয়ে ফুরাবেনা সে কোনদিন,
প্রভাতের রাঙ্গা সূর্য মুখ লুকিয়ে বিষাদে হয়েছিল মলিন।
দীর্ঘ নয়মাস টানা প্রতিবাদ আর ধ্বংসযজ্ঞের পাহাড় পেরিয়ে,
অবশেষে আশার আলো দেখতে পেল বাঙ্গালী অগণিত প্রাণ হারিয়ে।
হেরে গেছে পাক সেনা উঠেছে বিজয়ের দীপ্ত রাঙ্গা সূর্য বাংলার আকাশে,
বুক ভরে তাই নিঃশ্বাস নেই আজ আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে।
এ দেশের স্বাধীনতার ত্বরে দিয়ে গেছে যারা অমূল্য প্রান,
জানাই তাদেরে সালাম ভুলবোনা কোনদিন সেই আত্মদান।
———–
জাহান সৈয়দ
ওকভীল, অন্টারিও, কানাডা।