অনুবাদ, রুবি:
২০২৩ সালের শুরুতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যখন বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা-বাণী প্রদান করছিলেন, তখন তাঁর পিছনের শেল্ফের একটি ছবি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ওই ছবিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট সি ও তাঁর স্ত্রী পেং লি ইউয়ান প্রেসিডেন্টের মা ছি সিনকে হাত ধরে সাহায্য করছেন। মা ও সন্তান শক্ত করে হাত ধরে আছেন। হাত ধরার ভঙ্গিটি সহজ হলেও এটি একটি মূল্যবান স্মৃতি হয়ে আছে।
১৯৬৯ সালে ১৬ বছরেরও কম বয়সী সি চিন পিং চীনের সায়ান পেইয়ের লিয়াং চিয়া হ্য’তে কৃষিকাজ করতে যান। ছেলের হাজার মাইল দূরে যাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে মা ছি সিন তরুণ সি’র জন্য একটি ব্যাগ তৈরি করেছেন এবং ব্যাগের সামনের দিকটায় লাল সুতা দিয়ে ‘মায়ের মন’ কথাটি সেলাই করেছেন। সাত বছর ধরে গ্রামে কর্মরত থাকাকালে এ ব্যাগ সব সময় সি’র সঙ্গী ছিল।
সি চিন পিং’র মা ছি সিন জাপানের আগ্রাসন বিরোধী বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী একজন বীর সেনা। প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, “আমি অনেক গর্বিত যে, আমি একটি বিপ্লবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার পরিবারে রয়েছে কড়া বিপ্লবী নিয়ম। সন্তানদের ঝড় অতিক্রম করার শিক্ষাদান করা হয়।”
সি চিন পিং নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের পথে চলে আসার পর ছি সিন মাঝেমধ্যেই সি’কে চিঠি লিখেন। চিঠিতে নিজেকে কঠোরভাবে গড়ে তোলার কথা বলেন ছি সিন। কাজের ব্যস্ততা থাকার কারণে সি খুব কম সময়ই পরিবারের সঙ্গে মিলতে পেরেছেন।
২০০১ সালের বসন্ত উৎসব চলাকালে তৎকালীন ফু চিয়ান প্রদেশের গর্ভনর সি চিন পিং কাজের ব্যস্ততার কারণে বসন্ত উৎসব কাটাতে বাড়ী ফিরতে পারছিলেন না। মা ছি সিন তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। ফোনে ছি সিন বলেন, ‘অনেক কাজ! এ কথা শুনে আমি খুব আনন্দিত। বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা, তা আমার কাছে মুখ্য বিষয় নয়। তোমার ভালোভাবে দায়িত্বপালন হবে বাবা-মা’র প্রতি সন্তানের যোগ্য প্রতিদান। একে তুমি তোমার পরিবারের এবং নিজের দায়িত্ব মনে করো।’
পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে ছোট দেশ। হাজার হাজার পরিবার নিয়ে গঠিত একটি দেশ। সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর প্রেসিডেন্ট সি বিভিন্ন ইভেন্টে বলেছেন, বৃদ্ধদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে এবং প্রকৃত আবেগ ভুলা যাবে না। পরিবার, পারিবারিক শিক্ষাদান এবং পরিবারের শৈলীর ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের জাতীয় সভ্য পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সি চিন পিং বলেন, পরিবার শিশুদের প্রথম ক্লাসরুম। বাবা-মা শিশুদের প্রথম শিক্ষক-শিক্ষিকা। পারিবারিক শিক্ষা গড়ে তোলে প্রকৃত মানুষ। তৃণমূলের পরিবারের উচিত নিজস্ব আচরণ ও কথাবার্তার মাধ্যমে শিশুদের প্রথম সুন্দর শিক্ষা দেয়া।
২০১৭ সালে বসন্ত উৎসবের প্রাক্কালে সকল নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সময় সি চিন পিং তিনটি ‘না বোধক” বাক্য দিয়ে শতকোটি চীনাদের মনের উষ্ণতা জাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দূরে থাকার কারণে ভালোবাসা ছিন্ন করা যাবে না। দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারণে ভালোবাসার কথা ভুলবে না। দিন-রাত পরিশ্রমের কারণে ভালোবাসাকে উপেক্ষা করা যাবে না।
মায়ের ভালোবাসার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবে না সন্তান। মায়ের ভালোবাসায় তৈরি হয় সুন্দর পারিবারিক শৈলী। তারপর তা প্রভাবিত করে জগতের শৈলীকে। প্রতিটি পরিবারের অগ্রযাত্রায় দেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হয়। প্রতিটি পরিবারের তৈরি মূল্যবোধ চীনা জাতির পুনরুত্থানের শক্তি যোগায়।
সূত্র: চায়না মিডিয়া গ্রুপ।