আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তিন বছর পর ১ লা জুন যুক্তরাষ্ট্রের টেসলা কোম্পানির সিইও ইলোন মাস্ক আবারও চীনে এসেছেন। গত মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মাস্ক। মাস্ক তখন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, টেসলা ‘চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার’ বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের স্বার্থ পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। ঠিক জোড়া লাগা যমজ মানুষের মত। চীন-মার্কিন সম্পর্ক বিভিন্ন কঠিনতার মুখোমুখি হওয়ার প্রেক্ষাপটে, মাস্ক অনেক মার্কিন শিল্পপতির মনের কথাগুলো বলেছেন। ওয়াশিংটনের উচিত তাদের কথা শোনা।
চীনের বাজারের প্রতি আগ্রহকে মাস্ক কখনই লুকিয়ে রাখেন নি। তিন বছর আগে তিনি শাংহাইয়ে গিয়ে চীনের উৎপাদিত টেসলার মডেল ৩-এর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেন। ৩ বছরে টেসলা চীনের বাজারে বেশ ভালো উন্নত হয়েছে। টেসলার বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শাংহাই কারখানায় ২০২২ সালে টেসলার গাড়ির উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭.১ লাখ। যা বিশ্বের কোম্পানির মোট উৎপাদনের পরিমাণের অর্ধেক। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে, টেসলা চীনের বাজারে ১.৭ লাখ গাড়ি পাঠিয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৬১ শতাংশ বেশি। এক মাস আগে, টেসলার মেগাফ্যাক্টোরি প্রকল্প শাংহাইয়ের লিনকাং নতুন এলাকা বাছাই করে। বিশ্লেষণে বলা হয়, যদিও বর্তমান চীনে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি উৎপাদন কোম্পানির পরিমাণ অনেক, বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ জোরালো, তবে চীনের বাজার টেসলার মত বড় বড় কোম্পানির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, চলতি বছর অ্যাপেল, জেপি মরগান, জেনারেল মোটরসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা চীন সফর করেছেন। একদিকে, মার্কিন সরকার নিজের প্রতিষ্ঠানকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য উসকে দিচ্ছে; অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা কিন্তু চীনে আসছেন। যা ‘চীনের উন্নয়ন হল বিশ্বের উন্নয়ন’ এই কথার সর্বোচ্চ প্রমাণ!
মানুষ দেখেছে যে, এক সপ্তাহ আগে, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শাংহাইয়ে মার্কিন পুঁজি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, চীন দৃঢ়ভাবে উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নেবে, চীন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের চীনে উন্নয়ন এবং যৌথ কল্যাণ বাস্তবায়নে স্বাগত জানায়। আলোচনা সভার প্রতিনিধিরা বলেন, তাদের কোম্পানি চীনা বাজারের উন্নয়ন নিয়ে খুব আশাবাদী।
যেখানে বেশি লাভ হয়, সেখানেই পুঁজি যায়। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। চীন সরকারের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে চীনে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে মুনাফার হার ৯.১ শতাংশ। তবে ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে যা মাত্র ৩ শতাংশ। অন্যান্য নতুন অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সরকারি পুঁজি বিনিয়োগে মুনাফার হার ৪ থেকে ৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বাজার নিয়ে খুব আস্থাবান। তারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছে যে, মার্কিন সরকার চীনকে প্রতিরোধ করা এবং নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে শুধুই মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা রাজনীতির শিকার হতে চায় না। বৈজ্ঞানিক আধিপত্যবাদের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার বার সেমি-কন্ডাক্টরসহ হাই টেক প্রতিষ্ঠানকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করায় উসকে দিয়েছে। যা বাজারের অর্থনৈতিক নিয়ম এবং ন্যায্যতার লঙ্ঘন। তা বিশ্বের শিল্প চেইন এবং সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীল করার প্রধান বাধা। যুক্তরাজ্যের ফাইনাশিয়াল টাইমসের প্রবন্ধে বলা হয়, পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, শুধু চীনকে প্রতিরোধ করলেই ঝুঁকি থেকে বের হওয়া যায়। এই চিন্তাধারা বিরাট একটি ঝুঁকি।
চীন-মার্কিন অর্থনীতি গভীরভাবে মিশে আছে। দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা দু’দেশের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বিশ্বের জন্যও সহায়ক। এটি মৌলিক চিন্তাধারা। মার্কিন রাজনীতিকদের মাথায় শুধু ‘ভৌগলিক রাজনৈতিক স্বার্থ’, ‘ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থের’ বিষয়টি মাস্কের মতো মার্কিন শিল্পপতিরা স্পষ্টভাবে জানেন।
এদিকে, মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্ক ভালোভাবে উন্নত করতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর উত্থাপিত পারস্পরিক সম্মান ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হবে।
সূত্র:শুয়েই-তৌহিদ-জিনিয়া, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।