কিউবার ম্যানুয়েল মারেরো ক্রুজ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ষষ্ঠ চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় (সিআইআইই) যোগ দিতে প্রথমবারের মতো চীনে এসেছেন। সম্প্রতি তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-র সংবাদদাতা চৌ ইয়ুনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “চীন সফরে আসতে পেরে আমি খুবই সন্তুষ্ট। চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ছয় বছরে অত্যন্ত ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। কিউবা প্রতিটি মেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
সিআইআইই-তে যোগ দেওয়া খুবই আনন্দের বিষয়, যা বিশ্বের সেরা ও সবচেয়ে বড় আমদানি মেলা। এবার সিআইআইই-তে অংশগ্রহণের জন্য কিউবার উদ্যোক্তাদের একটি বড় প্রতিনিধিদল এসেছে এবং অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করে।”
তিনি মনে করেন, চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা কিউবা ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো শুধুমাত্র চীনা বাজারে প্রবেশ করতে পারছে তা নয়, বরং তাদের পণ্য ও পরিষেবা বিশ্বের বাজারে প্রসার লাভের সুযোগ পাবে। চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা উন্মুক্ততা ও অন্তর্ভুক্তির একটি ভালো উদাহরণ।
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ সমন্ধে মারেরো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, এ উদ্যোগ চীনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। তিনি সর্বদা বিশ্বাস করেন যে, এটি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। তাঁর চিন্তাভাবনা চীনের পরিধি অতিক্রম করেছে, একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এবং সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করার ধারণা প্রকাশ করে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ খুবই উন্মুক্ত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এতে যোগ দিতে পারে। কিউবার বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরাও ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগে অংশ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী মারেরো বলেন, চীন ও কিউবার মধ্যে বহু বছরের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব রয়েছে। অনেক দিক থেকে দুই দেশ একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধার সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, চীনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক শিখতে পারে তার দেশ, বিশেষ করে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের সাথে মানানসই একটি উন্নয়ন মডেল খোঁজার ক্ষেত্রে। যেমন, কিউবা এখন বৈশ্বিক বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বজায় আছে। কিউবায় বৈশ্বিক বিনিয়োগেও বাধা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কিউবায় বিনিয়োগে বিশ্বের অনেক কোম্পানি আগ্রহী।
প্রেসিডেন্ট সি’র সঙ্গে সাক্ষাতে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করেন মারেরো। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি’র বৈঠক ও বক্তৃতা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুসংহতকরণ ও উন্নয়নে গভীর প্রভাব ফেলেছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিউবা ও চীনের মধ্যে সবসময়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। কিউবা সবসময়ই আন্তর্জাতিক বিষয়ে কিউবার প্রতি চীনের সমর্থনের প্রশংসা করে। একই সময়ে, কিউবাও চীনকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে সমর্থন দিয়ে গেছে। তিনি দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা অনুভব করেন।
কিউবার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের বড় সম্ভাবনা আছে। এই বিষয়ে মারেরো আশা প্রকাশ করে বলেন যে, ভবিষ্যতে আরও বেশি চীনা পর্যটক কিউবায় ভ্রমণে আসতে পারে। এর জন্য তার দেশ অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছে, যেমন চীনা ভাষা লিখিত তথ্যবোর্ড এবং চীনের সাংস্কৃতিক প্রথা সমন্ধেও অনেক গবেষণা হয়েছে। তিনি এই সফরটিকে একটি অসাধারণ সফর হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি একটি সুদূরপ্রসারী অভিজ্ঞতা, যা তাকে এই দেশের প্রশস্ততা ও গভীরতা, এর সংস্কৃতি, এর বিকাশ এবং বিভিন্ন কোণ থেকে এর ইতিহাসকে উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছে। এটা খুবই অর্থবহ। তিনি বলেন, এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন পৃষ্ঠা খুলে দিয়েছে।
সূত্র: চায়না মিডিয়া গ্রুপ।