চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত ৩১শে মে শুক্রবার সকালে, বেইজিংয়ের মহাগণভবনে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের সাথে বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্ট সাইদ চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন এবং চীন-আরব সহযোগিতা ফোরামের দশম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীন ও তিউনিসিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, চীন এবং তিউনিসিয়া ভালো বন্ধু এবং ভালো ভাই। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, চীন তিউনিসিয়াকে তার জাতীয় অবস্থার সাথে মানানসই উন্নয়নের পথ বেছে নিতে সমর্থন করে। চীন তিউনিসিয়ার সাথে উন্নয়ন কৌশলের সংযোগ শক্তিশালী করতে, অবকাঠামো নির্মাণ ও নতুন শক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, সবুজ উন্নয়ন, জলসম্পদ, কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য নতুন গতি সঞ্চার করতে এবং দুই দেশের মধ্যে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে’র উচ্চমানের যৌথ নির্মাণ আরও ফলপ্রসূ করে তুলতে মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক।
আরও বেশি তিউনিসিয়ান মানসম্পন্ন পণ্যের চীনা বাজারে প্রবেশকে স্বাগত জানায় চীন। চীন, তিউনিসিয়ায় উচ্চস্তরের চিকিৎসা দল পাঠাতে, শিক্ষা, পর্যটন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তিউনিসিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে এবং মানুষে মানুষে ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জোরদার করতে ইচ্ছুক। উভয় পক্ষই ‘গ্লোবাল সাউথে’র দেশগুলোর সাথে সংহতি ও সমন্বয় জোরদার করতে, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা চর্চা করতে আগ্রহী এবং একটি সমান ও সুশৃঙ্খল বহুমেরু বিশ্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের পক্ষে। চীন, তিউনিসিয়ার সাথে চীন-আরব সহযোগিতা ফোরাম এবং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম গড়ে তুলতে, চীন-আরব সম্পর্কের উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চার করতে এবং উচ্চমানের চীন-আফ্রিকা অভিন্ন ভবিষ্যত কমিউনিটি গড়ে তুলতে ইচ্ছুক।
সাইদ বলেছেন যে, তিনি চীনে একটি ঐতিহাসিক সফর এবং তিউনিসিয়া ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীন-আরব সহযোগিতা ফোরামের দশম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। তিউনিসিয়া এবং চীন গভীর বন্ধুত্ব, অভিন্ন ধারণা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ সহযোগিতা উপভোগ করে। তিউনিসিয়া জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় চীনের কাছ থেকে আরও সমর্থন পাওয়ার আশা করছে এবং তিউনিসিয়া-চীন সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করার জন্য স্বাস্থ্য, পরিবহন, সবুজ উন্নয়ন, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে। তিউনিসিয়া দৃঢ়ভাবে এক-চীন নীতি মেনে চলে এবং জাতীয় পুনর্মিলনসহ মূল স্বার্থ রক্ষার জন্য চীনা সরকারের প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
উভয়পক্ষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়েও মতবিনিময় করেছে। সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন যে, চীন, আরব দেশগুলোর অবস্থানের সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে এবং ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ বাস্তবায়নের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন সমস্যার একটি সার্বিক, ন্যায্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য তিউনিসিয়া এবং অন্যান্য আরব দেশের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
আলোচনার পর, দুই রাষ্ট্রপ্রধান সবুজ ও নিম্ন কার্বন উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নথিতে স্বাক্ষর করার সময় উপস্থিত ছিলেন। উভয়পক্ষ ‘চীন ও তিউনিসিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার যৌথ বিবৃতি’ জারি করেছে।
আলোচনার আগে, সি চিন পিং এবং তার স্ত্রী ফেং লি ইউয়ান মহাগণবভনের পূর্ব চত্বরে প্রেসিডেন্ট সাইদ এবং তার স্ত্রী ইশরাফের জন্য একটি স্বাগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সেদিন দুপুরে সি চিন পিং এবং ফেং লি ইউয়ান মহাগণবভনের গোল্ডেন হলে সাইদ ও তার স্ত্রীর জন্য স্বাগত ভোজসভার আয়োজন করেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
সূত্র: স্বর্ণা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।