নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেছেন, নতুন প্রজন্মকে আরো স্মার্ট ও তথ্য সমৃদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক সরকারি দপ্তরের সিটিজেন চার্টার নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, তথ্য অধিকার আইন জনগণের জন্য একটি হাতিয়ার। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ সরকারি-বেসরকারী দপ্তরের তথ্য জানার মাধ্যমে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তিনি ১৩ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি, লক্ষ্মীপুর কর্তৃক আয়োজিত তথ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনব্যাপী উক্ত তথ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আরো বলেন, বর্তমানে সবধরণের তথ্য জনগণের হাতের মুঠোয়, সরকারি সকল দপ্তরের তথ্য এখন ওয়েবসাইটে সহজে পাওয়া যায়। তাই ওয়েবসাইট ভিজিট করেই আমরা সবধরণের তথ্য সহজেই পেতে পারি। তিনি বলেন, জনগণ সেবা নেওয়ার জন্য সরকারি দপ্তরে না গিয়েই অনলাইনে আবেদন করে সেবা নিতে পারে। সরকার চায় জনগণ যেন সরকারি দপ্তরে গিয়ে হয়রানীর শিকার না হয়, সেজন্য স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার কাজ করছে। জনগণ যদি অনলাইনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করে তাহলে সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ নেওয়ার সুযোগ পাবেনা। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে কোন তথ্যের জন্য কোথায় আবেদন করবো সে বিষয়টি জানতে হবে। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব । তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকলকে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া জাহান এর সভাপতিত্বে এবং সনাক সদস্য শাহানা আক্তারের সঞ্চালনায় মেলার উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ পিপিএম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী রেজাই রাফিন সরকার, সিভিল সার্জন ডাঃ আহাম্মদ কবীর, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), লক্ষ্মীপুরের সভাপতি প্রফেসর জেড.এম ফারুকী।
সভাপতির বক্তব্যে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জনগণ কোন তথ্য কোথায় পাবে তা জানে না বলেই তারা তথ্য পেতে ভোগান্তির শিকার হয়। তিনি বলেন, ভূমি অফিসের তথ্য যদি ডিসি আিফসে চাওয়া হয় তাহলে ডিসি অফিসের পক্ষে সে তথ্য প্রদান করা সম্ভব নয়, এজন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসেই আবেদন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, লক্ষ্মীপুরের সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে অনেক দপ্তরের তথ্য এখনো ওয়েবসাইটে নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়না। তিনি সরকারি দপ্তসমূহের ওয়েবপোর্টাল নিয়মিত হালনাগাদ করার তাগিদ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ পিপিএম বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ি তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে, জনগণ চাইলে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য আবেদনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে। তবে জনগণ তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে এমন কোন তথ্য চাইতে পারেবেনা যা তথ্য অধিকার আইনে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী জনাব রেজাই রাফিন সরকার তাঁর বক্তব্যে তথ্য অধিকার আইনের গুরুত্ব ও ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দপ্তরে সেবা সঠিকভাবে পেতে হলে তথ্যই অনেক জন্য বড় একটা শক্তি। সাধারণ জনগণের মাঝে তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেই দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে।
মেলায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সনাক সদস্য প্রফেসর রফিকুল আহসান এবং তথ্য মেলার প্রাসঙ্গিকতা ও এই মেলা থেকে সনাক-টিআইবি’র প্রত্যাশা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র চট্টগ্রাম বিভাগের ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মো: জসিম উদ্দিন।
তথ্য মেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ইয়েস গ্রুপের বিশেষ উদ্যোগের আওতায় দুর্নীতিবিরোধী কুইজ, বিতর্ক ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং মেলায় আগত দর্শনাথীদের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে তথ্য পেতে পারেন সেজন্য তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফরম পূরণ সম্পর্কে ধারনা প্রদান করা হয়। এতে লক্ষ্মীপুরের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও মেলায় কিশোর কিশোরী স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা, সরকারি পরিষেবা বিষয়ক সেবা সংলাপ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননী সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এ মেলায় লক্ষ্মীপুরের সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী ৩৫টি প্রতিষ্ঠান তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী জনগণকে তথ্য প্রাপ্তির কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে। মেলা চলাকালীন আগত দর্শনার্থীরা বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় চার সহস্রাধীক আবেদন করে এবং আবেদনের বিপরীতে বেশীরভাগ দপ্তর তৎক্ষনাৎ তথ্য প্রদান করেন। সকাল দশটায় টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মাধ্যমে শুরু হয়ে সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হয় রাত ৮টায়। সারাদিন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ মেলা পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহণ করেন। বিকেলে পুরস্কার বিতরণ এবং সনাক-ইয়েস গ্রুপের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তথ্য মেলার সফল সমাপ্তি হয়।