জিনিয়া, আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীনের রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২.০২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬.৮ শতাংশ বেড়েছে। মার্চ মাসের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে এপ্রিল মাসে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের শক্তিশালী পারফর্মেন্স প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) বলেছে যে, বিশ্বের চাহিদা দুর্বল হলেও, চীনের রপ্তানি আরও ‘আশ্চর্যজনকভাবে’ শক্তিশালী গতি পেয়েছে।
মাত্র কয়েকদিন আগে, ১৩৩তম চীন আমদানি ও রপ্তানি মেলা (ক্যান্টন ফেয়ার) শেষ হয়েছে। এই ক্যান্টন ফেয়ারে প্রদর্শনীর মোট এলাকা, অফলাইন প্রদর্শকদের সংখ্যা এবং ফেয়ারে আসা লোকের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ক্যান্টন ফেয়ারের জনপ্রিয়তা থেকে চীনের বিদেশি বাণিজ্যের সাফল্য দেখা যায়। এ বছরের প্রথম চার মাসে, চীনের মোট আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৩.৩২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে রপ্তানি বেড়েছে ১০.৬ শতাংশ, আমদানি বেড়েছে ০.০২ শতাংশ।
চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের সাফল্য সহজে আসেনি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র এক শতাংশ বাড়বে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২.৫ শতাংশ কম। উচ্চ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির পটভূমিতে এবং প্রধান অর্থনীতির মন্থর প্রবৃদ্ধির পটভূমিতে তা বাহ্যিক চাহিদাকে দুর্বল করে দেয়, চীনের বিদেশি বাণিজ্যের কেমন শক্তি রয়েছে?
প্রথম ৪ মাসের বিদেশি বাণিজ্যের তথ্য অনুসারে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামো ক্রমাগত উন্নত করা হয়েছে।
বাজারের দৃষ্টিকোণ থেকে, বেসরকারি বিদেশি বাণিজ্যিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা অসামান্য। এ ছাড়া, চীন ও উদীয়মান বাজারের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে এবং আসিয়ান ও ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বরাবর দেশগুলিতে আমদানি ও রপ্তানি যথাক্রমে ১৩.৯ শতাংশ ও ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের পারফর্মেন্স কেন এত শক্তিশালী? এটি চীন সরকারের উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের অব্যাহত প্রচার এবং বিদেশি বাণিজ্য স্থিতিশীল করার ধারাবাহিক পদক্ষেপ প্রবর্তনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বছরের শুরু থেকে, চীনের বিভিন্ন আঞ্চলিক সরকার বিদেশি বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য নানা ব্যবস্থা চালু করেছে। এপ্রিলের শেষ দিকে, চীন সরকার অফলাইন প্রদর্শনী শুরু করা এবং ক্রস-বর্ডার ই-কমার্সের মতো নতুন ফরম্যাট ও মডেলের মাধ্যমে বিক্রয় চ্যানেলগুলি প্রসারিত করতে বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে সমর্থন দিয়েছে, একাধিক নীতি ও ব্যবস্থা চালু করেছে। যা বিদেশি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলির জন্য নতুন উন্নয়নের অবস্থা খুলে দিয়েছে।
আগামী ২ জুন, “আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি” (আরসিইপি) ১৫টি সদস্য দেশের জন্য সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে এবং আরসিইপি সার্টিফিকেট অফ অরিজিনে আরও বেশি সংখ্যক কোম্পানি স্বাগত জানিয়েছে। এটি ‘বিদেশমুখী’ চীনা বিদেশি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলিকে আরও বেশি সুবিধা দেবে।
সম্প্রতি, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং শিল্প ঘন ঘন ঝুঁকির মুখে পড়ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ সুদের হার আরও বাড়িয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়ছে। এ অবস্থায় চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন এখন অনেক বড় বাহ্যিক চাপের মুখে পড়েছে। তবে, আমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে, চীনের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের বর্তমান চাহিদা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, রপ্তানি এলাকা এবং পণ্য কাঠামো আরও উপযুক্ত হয়েছে এবং ব্যবসায়িক সত্ত্বার প্রাণশক্তি বেড়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, দেশের মেলার বিকাশ, আরও সুবিধাজনক কর্মী বিনিময় এবং বাণিজ্যিক উদ্ভাবন ক্রমাগত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীন বিশ্বকে একটি শক্তিশালী সংকেত দিতে চায়। তা হলো- চীনের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
সূত্র: জিনিয়া,চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি)।