২৬ এপ্রিল বিকালে বেইজিংয়ে গণ-মহাভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টোনি ব্লিনকেন।
সি চিন পিং বলেন, চলতি বছর চীন-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী। ৪৫ বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে। যেমন, দুই দেশের অংশীদার হওয়া উচিত, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়; পরস্পরকে ক্ষতি নয়, সাহায্য করা উচিত। দু’পক্ষের উচিত মতৈক্য খোঁজা এবং ভিন্নতাকে সম্মান করা। প্রতিশ্রুতি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। জনাব সি তিনটি প্রধান নীতিগত প্রস্তাব দেন। তা হলো- পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং উভয়ের-জয় সহযোগিতা। এসব অতীত অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপই নয়, বরং ভবিষ্যতেরও পথপ্রদর্শন করে।
জনাব সি চিন পিং তিন সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বছর চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীল বিকাশ নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসের মূল্য দেওয়ার চিন্তাধারা উত্থাপন করা হয়েছে।
সি চিন পিং আরো বলেন, এখন বিশ্বে গভীর পরিবর্তন চলছে এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ জোরদার করা, পার্থক্য মোকাবিলা করা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দু’দেশের জনগণের সাধারণ আকাঙ্ক্ষাই নয়, আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন প্রত্যাশাও বটে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিকাশ এবং স্বাধীনভাবে সমৃদ্ধির জন্য পৃথিবী যথেষ্ট বড় বলে উল্লেখ করেন জনাব সি। চীন একটি আত্মবিশ্বাসী, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়। চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উন্নয়নকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে। শুধুমাত্র মৌলিক এ সমস্যার সমাধান হলে, চীন-মার্কিন সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল, কল্যাণকর এবং অগ্রসর হবে।
সি চিন পিং বলেন, সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে “সান ফ্রান্সিসকো ভিশন” উত্থাপন করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে, দু’দেশের কর্মদল এসব ঐকমত্য বাস্তবায়ন করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ বজায় রেখেছে এবং কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে, এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে যা সমাধান করা দরকার। জনাব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবার চীন সফর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি। এ সফর সার্থক হবে বলে আশা করেন জনাব সি।
জনাব ব্লিনকেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দুই দেশের প্রেসিডেন্ট সান ফ্রান্সিসকোতে সাক্ষাতের পর থেকে দু’পক্ষ মাদক নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জনগণের মধ্যে সহযোগিতা-সহ বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্ব আজ অনেক জটিল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁর চীন সফরে চীনে বসবাসরত সর্বস্তরের মার্কিন জনগণ আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক উন্নত হবে। যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধ’ চায় না, চীনের ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না, চীনের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় না, জোটের মাধ্যমে চীন-বিরোধিতাও করতে চায় না এবং চীনের সঙ্গে সংঘর্ষের কোনো ইচ্ছা নেই। যুক্তরাষ্ট্র এক-চীন নীতি মেনে চলে এবং চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে চায়, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সান ফ্রান্সিসকো ঐকমত্যকে আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করা, আরও সহযোগিতা করা, ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল ধারণা এড়ানো, দায়িত্বের সাথে পার্থক্যগুলো পরিচালনা করা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চায় বলে উল্লেখ করেন ব্লিনকেন।
সূত্র: চায়না মিডিয়া গ্রুপ।