শুয়েই ফেই ফেই:
গাড়ি উৎপাদন ও বিক্রিতে টানা ১৪ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। পাশাপাশি নতুন-জ্বালানি গাড়ি বা এনইভির উৎপাদন ও বিক্রিতেও টানা ৮ বছর ধরে একই রকম সাফল্য ধরে রেখেছে দেশটি। চীনের এনইভি ব্র্যান্ডের প্রসার এবং ভালো গুণগতমান বাজারে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং তাদের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ব বাজারে চীনা এনইভির প্রসারের পদক্ষেপও দ্রুততর হচ্ছে।
চীনের একটি গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সালভাদোরে তিনটি কারখানার সমন্বয়ে গঠিত এক বড় আকারের উৎপাদন কমপ্লেক্স নির্মাণ করবে। এতে থাকবে বিদ্যুৎ-চালিত বাস ও ট্রাকের চেসিস উৎপাদনের কারখানা, নতুন-জ্বালানি গাড়ি উৎপাদনের কারখানা এবং বিশেষ করে লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি উপাদানের কারখানা। কারখানাটি ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্থে চালু হবে। গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা এখান থেকে বছরে দেড় লাখ গাড়ি তৈরি করা।
এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ভাইস-চেয়ারম্যান লি ক্য বলেন, ব্রাজিলে বড় আকারের উৎপাদন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলো আমেরিকা অঞ্চলের বাজারে প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা স্থানীয় বাজারে নতুন-জ্বালানি গাড়ির জনপ্রিয় হওয়ার জন্য সহায়ক। তিনি বলেন, আমরা কেবল বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি এবং প্লাগ-ইন হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করা যায় এমন কারখানা নির্মাণ করছি না ব্রাজিলে বরং পুরো বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির সিস্টামকে ব্রাজিলে নিয়ে এসেছি। আগামী কয়েক বছরে আমরা ৩ বিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান রিয়াল (প্রায় ৬২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করবো এবং ৫ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো।
এ ছাড়া গত মার্চ মাসে ১১৭টি চীনা ব্র্যান্ডের নতুন-জ্বালানি গাড়ি চীনের লান ইয়ুন কাং শহর থেকে মেক্সিকোতে পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চিলিতে একটি চীনা বাস প্রতিষ্ঠান ১০২২টি বিদ্যুৎ-চালিত বাসের অর্ডার পেয়েছে। এটা চীনা বাস প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তম বিদেশি অর্ডার পাওয়ার রেকর্ড।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গাড়ি বাজার। এখানে বার্ষিক গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ৫০ লাখেরও বেশি, যা বিশ্ব গাড়ি বাজারের প্রায় ৬ শতাংশ। চীনের মেশিনারি ও ইলেক্ট্রোনিক্স আমদানি-রপ্তানী শিল্প সমিতির গাড়ি শাখা অনুমান করছে, ২০২৩ সালে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে এনইভির হার মোট গাড়ির ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। এর মধ্যে ব্রাজিল ও মেক্সিকোর ক্রয়ক্ষমতা হবে সবচেয়ে বেশি।
মধ্যপ্রাচ্যেও চীনের নতুন-জ্বালানি গাড়ি অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ২০২২ সালে কাতার ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় চীনা কোম্পানির উৎপাদিত ৮ শতাধিক বিদ্যুৎ-চালিত বাস গণ-যাতায়াতে সেবা দেওয়ার প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়। পরে এসব বাস স্থানীয় গণ-যাতায়াত সিস্টেমে যুক্ত হয়। ২০২২ সালের শেষ দিকে চীনের একটি গাড়ি কোম্পানি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হাজার নতুন-জ্বালানি গাড়ি বিক্রির চুক্তিতে সই করেছে। এ গাড়ি কেনার লক্ষ্য স্থানীয় লজিস্টিক্সের সবুজ রূপান্তরে সাহায্য করা। এ ছাড়া চীনের নতুন-জ্বালানি গাড়ি দুবাই পুলিশের গাড়িবহরে যোগ দিয়েছে। এটাই দুবাই পুলিশের গাড়িবহরে প্রথমবারের মতো নতুন-জ্বালানি গাড়ির সংযোজন।
অন্যদিকে গত মে মাসে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আয়োজিত দ্বিতীয় মধ্যপ্রাচ্য বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি প্রদর্শনীতে যেসব গাড়ি প্রদর্শিত হয়, সেগুলোর এক-তৃতীয়াংশ ছিল চীনা গাড়ি। একজন স্থানীয় গাড়ি যন্ত্রাংশ বিক্রেতা বলেন, লেবাননের গাড়ি বাজার চীনা ব্র্যান্ডের নতুন-জ্বালানি গাড়িগুলোকে বেশ পছন্দ করেছে, কারণ এটা ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করে।
ক্রেতারা চীনের নতুন-জ্বালানি গাড়ি কেনার পর জানতে পেরেছে যে, এসব গাড়ি বেশ ভালো এবং আন্তর্জাতিক মানের। তারা এভাবে কিনতে থাকবে। আস্তে আস্তে চীনের নতুন-জ্বালানি গাড়ির চাহিদাও বাড়বে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা এনইভির স্বীকৃতি দেখে মধ্যপ্রাচ্য চীনের নতুন-জ্বালানি গাড়িনির্মাণ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত জুন মাসে আবুধাবির একটি বিনিয়োগ সংস্থা চীনের একটি গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একই মাসে আয়োজিত চীন-আরব সহযোগিতা ফোরাম চলাকালে সৌদি আরবের পুঁজি বিনিয়োগ মন্ত্রণালয় আরেকটি চীনা গাড়ি কোম্পানীর সঙ্গে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ইউয়ানের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, ভবিষ্যতে গাড়ি গবেষণা, উৎপাদন ও বিক্রির প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
সূত্র: চায়না মিডিয়া গ্রুপ।