মাহমুদ ফারুক:
মানবকল্যাণ সংস্থা, সংক্ষেপে এমকেএস। সাইনবোর্ডে গভ: রেজিঃ নং এস ১১৫৭০ (৭৮৫) ২০১২ইং। প্রশিক্ষণ ও মানবকল্যাণ কেন্দ্র নাম দিয়ে রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শেখপুরা বাজারের দক্ষিণে একটি নির্জন মার্কেটে স্থাপন করে প্রকল্প কার্যালয়।
সু-নির্দিষ্টভাবে এ কার্যালয়টি কবে স্থাপন করা হয়েছে বা মানবকল্যাণ সংস্থা বা এমকেএস’র কাজ কি তা বলতে পারেননি ভুক্তভোগি কেউই।
তবে স্বল্প সুদে বিদেশযাত্রীদের বিশেষ ঋণ পাওয়ার সুবিধার কথা বলে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ উঠেছে বে-সরকারি সংস্থা এমকেএস’র কর্মকর্তা কর্মচারীগণের বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার বিকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত শত শত প্রতারিত পুরুষ মহিলা উক্ত মানবকল্যাণ সংস্থা নামের এনজিও সংস্থায় টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কায় ভীড় করেছেন শেখপুরা প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাওয়ালিডাঙ্গা ডেঙ্গুর বাড়ীর ফাতেমা বেগমের ২০ হাজার, ফাতেমা বেগমের ৩০ হাজার, মোহন আলমের ১৫ হাজার, পশ্চিম বিঘা গোদার বাড়ীর জান্নাতুল ফেরদৌসের ৪০ হাজার, একই বাড়ীর শিল্পি আক্তারের ২০ হাজার, পূর্ব বিঘা জগি বাড়ীর আমেনা বেগমের ২০ হাজার, শামছুর নাহার ২০ হাজার, পূর্ব বিঘা খন্দকার বাড়ীর মমিন হোসেনের ২৯ হাজার, সাথী আক্তারের ১২ হাজার, জলিল মিয়ার ৩০ হাজার, ফাতেমা আক্তারের ১৫ হাজার, পূর্ব শেখপুরা সৈয়দ আলী ব্যপারী বাড়ীর মোরশেদ আলম সোহাগের ১৮ হাজার, নোয়াগাঁও গ্রামের মালেক হাজী বাড়ীর মোঃ আল আমিনের ৪০ হাজার, সোনাপুর খলিফা বাড়ীর জামাল হোসেনের ৮ হাজার, পাশ^বর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাফা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ১৭ হাজার, খলিলুর রহমানের ২০ হাজার, তাসলিমা আক্তারের ২০ হাজার, মিন্টু মিয়ার ৩০ হাজার, রাজিব হোসেনের ৩০হাজার টাকাসহ দুই শতাধীক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় সংস্থার লোকজন।
প্রতারনার শিকার লোকজন জানান, বেশিরভাগ মানুষই স্বামী ও ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর সুবিধায় ঋণ গ্রহণে এ সংস্থাটির গ্রাহক হন। সপ্তাহে ২শ টাকা করে সঞ্চয় দিয়ে চাহিদামতো টাকার আবেদন করা হয় সংস্থার কর্মকর্তাদের নিকট। ১লাখ, ২ লাখ ও ৫ লাখ টাকা দিবে বলে এককালীন ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেয় সংস্থার ৪/৫জন পুরুষ ও একজন মহিলা। গত ১৫ দিন আগ থেকে আমাদের সবাইকে আজ সোমবার ঋণ দিবে বলে খবর দেয়া হয়। আমরা অফিসে এসে দেখি অফিসের মেইন গেইটে তালা মারা। সংস্থার কর্মকর্তা আতিক স্যার, আছমা মেডামসহ সকলের মোবাইল বন্ধ। আমরা অল্প সুদে এখান থেকে ঋণ পাওয়ার আশায় অন্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছি। এখন আমরা সর্বস্ব হারিয়েছি। আমরা এখন কি করবো জানি না, চোঁখে অন্ধকার দেখছি।
স্থানীয় ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জানান, এ বাড়ীটি একই এলাকার মৃত আবদুল কাদের মিয়ার। তার স্ত্রী ও ছোট একটি মেয়ে ছাড়া পরিবারের আর কেউ নেই। কিভাবে বাড়িটি এ এনজিও সংস্থা ভাড়া নিয়েছেন আমরা তা জানি না। তবে এসময় তিনি আরো জানান, গত ১৫/২০দিন আগে লক্ষ্মীপুর থেকে কয়েকজন লোক এসে মালামাল রেখে যান এখানে। তারা পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে চুক্তি করবেন বলে জানালেও এখন তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্দ রয়েছে।
রামগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, এনজিও সংস্থার ব্যপারে আমাদের কোন তদারকি নেই। এছাড়া এনজিও ব্যুরো ঢাকার মাধ্যমে ঋণদান বা এনজিও সংস্থাগুলো অনুমোদন পায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রামগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক ময়নাল ইসলাম। তিনি জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে সঞ্চয়ের বইতে দেয়া কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়ে চেষ্টা করবো ঘটনা উদঘাটনে।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান, এদের লাইসেন্স নম্বরটি ভূয়া হতে পারে। গোপনে অফিস স্থাপন করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। প্রতারকদের শনাক্ত করা না গেলেও বা সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগন।