নিজস্ব প্রতিবেদক: এ যেন অন্ধকার জগতের জুলুম ও নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন দুই বোনকে বেধম মারধর ও বড় বোন তাহমিনা বেগমের চুল দিয়ে সুপারী গাছের সাথে বেঁধে বেধম মারধর করার মারাত্মক অভিযােগ পাওয়া গেছে এমরান হোসেন নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। মারধরে তাহমিনা আক্তারের একটি দাঁত পড়ে গেছে বলেও জানা যায়।
জমি সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনায় ইসলামি ফাউন্ডেশনের গণশিক্ষার শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম (৪০) ও তার ছোট বোন কামরুন্নাহার বেগম (৩৫) কে একই এলাকার প্রভাবশালি এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে বেধম মারধরের অভিযোগ এনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে দুই বোনসহ বাড়ীর নির্যাতিত অন্য মহিলারা।
আজ শুক্রবার সকালে রামগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এসে লিখিত ও ভিডিও ক্যামেরার সামনে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর মজুমদার বাড়ীর (মন্দার বাড়ী) মৃত আবদুল জলিলের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক সন্তানের জননী তাহমিনা বেগম ও তার ছোট বোন কামরুন্নাহার বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে তাহমিনা বেগম জানান, গত ১৪ মে রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রান্না করার সময় একই বাড়ীর নুরুল আমিন মান্নার ছেলে এমরান হোসেন মজুমদার আমাদের ঘরের সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলে আমি ও আমার বোন ভয়ে দরজা বন্ধ রেখে ঘরের ভিতরে অবস্থান করি। কিছুক্ষণ পর ঘরের বাহিরে বের হয়ে আসলে এমরান ও তার মা নুরজাহান বেগম আমাকে রান্না ঘর থেকে টেনেহিঁছড়ে পাশ্ববর্তি সুপারী বাগানে নিয়ে বেধম মারধর শুরু করে।
মারধরের এক পর্যায়ে নুরজাহান বেগম ও তার ছেলে এমরান আমার চুলগুলো দুইদিকে থেকে একটি সুপারী গাছের সাথে বেঁধে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে। এসময় তাদের আঘাতে আমার একটি দাঁত পড়ে যায়। আমার আত্মচিৎকারে ছোট বোন কামরুন্নাহার বেগম আমাকে উদ্ধার করতে দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসলে তাকেও এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। বাড়ীর লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে আসলেও কেউ আমাদের দুইবোনকে মারধরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
এদিকে একই সংবাদ সম্মেলনে এমরান হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার আরো ৫ ভুক্তভোগী নারী বক্তব্য রাখেন। একই বাড়ীর মৃত আবদুল মান্নানের স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৫৫), আবদুর রশিদের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার মিনারা (৫৫), মাওলানা সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (৫৩), মৃত আবুল কালামের স্ত্রী মুকসুদা বেগম (৬০) জানান, আমাদের জমি ও সম্পদ জবর দখল করে রাস্তার উপর বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে এমরান হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন। কয়েকদফায় বাড়ীর মহিলাসহ লোকজনকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করলেও কেউ বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানোর পরও তারা কয়েকবার শালিস বৈঠকের সময় দিয়ে কালক্ষেপন করে।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত এমরান হোসেন জানান, আমি ঢাকায় থাকি। বাড়ীতে সামান্য বিষয় নিয়ে সবসময় অভিযোগকারী মহিলারা অশ্রাব্য ভাষায় ঝগড়ায় লিপ্ত থাকে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায়ই আমার মা’কে মারধর করতে তেড়ে আসে। গালাগাল করার সময় আমি বাড়ীর অন্য মহিলাদের বাধা দিতে গেলে আমার উপর তারা আক্রমন করে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমির হোসেন জানান, আমি অসুস্থ্যবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকায় বিষয়টি যথাসময়ে সমাধান করার সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ আদালতে গত বৃহস্পতিবার একটি অভিযোগ দায়ের করলে আগামীকাল শনিবার (২০ মে) সকাল ১০টায় উভয়পক্ষকে ডেকেছি। সুবিচার না পেলে তারা থানায় গিয়ে মামলা করবে।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদুল হক জানান, আমরা এ ব্যপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিধিমতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।