মাহমুদ ফারুক:
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত মাটির রাস্তায় বেড়া দিয়ে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে লকিয়ত উল্যাহ নামের এক সাবেক ইউপি সদস্য ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে। উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব করপাড়ায় নাপিত বাড়ির সামনে শ্যামপুর সড়কে এ বেড়া দেওয়া হয়। এতে মারাত্মক দূর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও বেশ কয়েকটি পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ সাবেক ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যাহ ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় স্বাক্ষি দেয়ায় ক্ষিপ্ত লকিয়ত উল্যাহ জনগনের চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়ে হয়রানি করছে।
ভুক্তভোগি লোকজন সড়কে বেড়া দেয়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গণস্বাক্ষরসহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব করপাড়া এলাকার লোকজন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। এ এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবারের কয়েকশ সদস্যের একমাত্র চলাচলের সড়ক এটি। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও হাটবাজারে যেতে হলে এ সড়কটির বিকল্প নেই। জনগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়কটির ইটের সলিংকরণের কাজ শুরু করে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
কিন্তু সাবেক ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যাহ ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবীকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে রাতের আঁধারে সড়কের মুখে বেড়া দেন। একই সঙ্গে সড়কের এক পাশে বেড়া দিয়ে গাছের চারা লাগিয়ে মানুষের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বলেও অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়।
স্থানীয় কয়েকজন লোক জানান, সাবেক ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যাহ কতিপয় ব্যক্তিদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেন। এবং বিগত কয়েক বছর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে তা আত্মসাত করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলে এলাকাবাসীর সাথে বিরোধ দেখা দেয়। পরে সমাজসেবা কার্যালয়ের তদন্ত কর্মকর্তা ও সমাজসেবা অফিসার আনোয়ার হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে উত্তোলনকৃত ভাতার টাকা ফেরত (রি-ফান্ড) দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার জানান, সড়কে উন্নয়ন কর্মসূচি চলাকালে সাবেক ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যাহ ও তাঁর ছেলে নুর উল্যাহ, ইকবাল হোসেন জসিমসহ কয়েকজন দূস্কৃতিকারী আমাদের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় সড়কে বেড়া দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচলে তাঁরা বাধা সৃষ্টি করেছেন। সরকারিভাবে পাকাকরনে রাস্তাটির কোড নং ৪৫১৬৫৫৫৯১।
সাবেক ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যাহর ছেলে সেলিম মিয়া চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রাস্তাটি সম্পূর্ণ আমাদের জায়গার উপর দিয়ে গেছে। আমরা আগে তাদেরকে চলাচলের জন্য দিয়েছি কিন্তু স্থায়ীভাবে পাকাকরনের জন্য দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আগামীকাল চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আর আমার বাবা (লকিয়ত উল্যাহ) মোবাইল ব্যবহার করেন না। তিনি এখন কোথায় আছেন, আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে করপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহীদ মীর্জা বলেন, সড়কে বেড়া দিয়ে এবং চারাগাছ লাগিয়ে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অধিকার কারও নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উভয়পক্ষের সাথে বসে সমাধান করা হবে। তবে কে কার কাছে চাঁদা চেয়েছে তা আমার জানা নেই।
এ ব্যপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে সাবেক ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যাহ নামের এক লোক নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার প্রায় ৫লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। ২০১৬ সালের পর তা প্রমানিত হওয়ায় আমরা লকিয়ত উল্যাহকে ভাতার টাকা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। তার মধ্যে ৫০হাজার টাকা এককালীন পরিশোধ করলেও বাকী টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা। আমি এখন অফিসে নাই, খোঁজ নিয়ে জানতে পারবো আত্মসাতকৃত ভাতার টাকা সে রি-ফান্ড করেছে কি না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: শারমিন ইসলাম বলেন, রাস্তায় বেড়া দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের বাধা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। বেড়া তুলে দিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে যদি কেউ মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে সরকারি ভাতার টাকা আত্মসাত করে, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।