শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
Logo সারাদেশের সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা Logo কোটা সংস্কার আন্দোলন: দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে নিহত ৫ Logo বিদ্যালয়ে না এসে বেতনভাতা উত্তোলন; বদলি হলেন বিতর্কিত সে-ই প্রধান শিক্ষক Logo নতুন যুগে চীনের সংস্কারনীতি: মূল উদ্দেশ্য চর্চা করে উদ্ভাবনী উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা Logo চীন সামুদ্রিক পরিবেশের মান অব্যাহতভাবে উন্নত করেছে:শ্বেতপত্র প্রকাশ Logo চীনের উন্নয়ন বিশ্বের জন্য সুযোগ প্রদান অব্যাহত রাখবে:সিএমজি’র সিজিটিএন পরিচালিত জরিপ Logo সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরনের জন্মদিন পালন হলো হাডসন নদীর বুকে Logo চীন বাংলাদেশকে জাতীয় উন্নয়নে সহায়তা করতে ইচ্ছুক:হাসিনার সাথে বৈঠকে সি Logo মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ প্রচার করা:চীনে দশম বিশ্ব সভ্যতা ফোরাম Logo ভারত-চীন সম্পর্কের বৈশ্বিক তাৎপর্যও রয়েছে: বিশেষ বার্তায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নোটিশঃ
যে কোন বিভাগে প্রতি জেলা, থানা/উপজেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘bdpressnews.com ’ জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিক নিয়োগ ২০২৩ চলছে। বিগত ১ বছর ধরে ‘bdpressnews.com’ অনলাইন সংস্করণ পাঠক সমাজে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাঠকের সংখ্যায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছে তরুণ, অভিজ্ঞ ও আন্তরিক সংবাদকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ‘bdpressnews.com‘ পত্রিকায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার এ ধাপ

সাংহাইয়ের গ্রামের জমি ও শান্ত জীবন চীনের আশা ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব পালন করে

অনুবাদ: শিশির: / ৯৪ Time View
Update : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:০৫ অপরাহ্ন

অনুবাদ: শিশির:
শাংহাই, চীনের বড় ও উন্নত শহরের মধ্যে অন্যতম। শাংহাইয়ে কোনো গ্রাম আছে কি? শাংহাইয়ের আয়তন ৬৩৪০.৫ বর্গকিলোমিটার এবং এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের আয়তন ৪১০০ বর্গকিলোমিটার। শাংহাইয়ে গ্রামের সংখ্যা ১৫৪৮টি। শাংহাইয়ের কৃষকের সংখ্যা ১২ লাখ ১৫ হাজার। বড় কৃষি অধ্যুষিত প্রদেশের তুলনায় শাংহাইয়ের গ্রাম বা চাষের জমি বেশি না। তবে মেগা নগরী হিসেবে শাংহাই ভাল একটি উদাহরণ। এতে বোঝা যায় চীনে শহর ও গ্রামের সম্পর্ক কী রকম হয় এবং তাদের একীকরণ কিভাবে হয়।
গ্রামের প্রাণশক্তি নির্ভর করে যুবশক্তির ওপর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাংহাইয়ের গ্রামে পারিবারিক হোটেল ব্যবসা করতে অনেক তরুণ মানুষ গ্রামে ফিরে এসেছে। ৩ বছর আগে কাং চিয়া ওয়ে গ্রামে ফিরে যান এবং পারিবারিক হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। তবে তার বাবা মা নিজে তৈরি বাড়িঘরের স্টাইল হোটেল ব্যবসার জন্য উপযোগী ছিল না। রিয়েল এস্টেট কাজে জড়িত ছিলেন কাং। তাই তিনি পেশাদার একজন নকশাকার নিয়োগ করে বাড়িঘরের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণ নতুন করে সাজান। অভ্যন্তরীণ এয়ার কন্ডিশনার, মেঝে গরম রাখার ব্যবস্থা, সরাসরি পানীয় জলসহ সাধারণ হোটেলে যা যা থাকে- তার গ্রামীণ হোটেলেও তা পাওয়া যায়। হোটেলের জন্য ৭টি রুম আছে এবং সং রাজবংশ আমলের বিখ্যাত একজন কবির কবিতার কথা অনুযায়ী তিনি এ হোটেলকে ‘উ ইয়ু সু ইউয়ে’ নাম দিয়েছেন। সু ইউয়ে মানে সুন্দর চাঁদ এবং দক্ষিণ চীনের আঞ্চলিক ভাষায় সু ইউয়ে শুনতে সু ইউয়ানের মতো, যার অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শাংহাইও গ্রামের ভিত্তিতে উন্নত হওয়া একটি শহর এবং গ্রামীণ হোটেলের মাধ্যমে গ্রামের প্রতিটি শহরে বাসিন্দা ও পর্যটকদের জন্য ভালবাসা প্রতিফলিত হয়। শাংহাইয়ের নানা গ্রামে বিভিন্ন স্টাইলের পারিবারিক হোটেল দেখা যায় এবং নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যও দেখা যায়। আর তাদের অভিন্ন বৈশিষ্ট্যও আছে। তা হলো চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল এবং তা পানি ও বনের কাছে অবস্থিত। কোন কোন হোটেল ধান ক্ষেতের পাশে থাকে। সবসময় রুমে বসে বিশাল ও সোনালি ধানক্ষেত দেখতে পাওয়া যায়, যা খুবই সুন্দর দৃশ্য।
গ্রামের সৌন্দর্য মূলত প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানুষের সৌন্দর্য। সেখানে মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ আকর্ষণীয়। এক সময় শাংহাইয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চল ধান ক্ষেত ছিল এবং সময় চলে গেলেও শান্ত ও ধীর- এমন জীবনযাপনের প্রতি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা কখনও পরিবর্তন হয়নি। সুন্দর গ্রাম নির্মাণ করতে চাইলে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম তৈরি করতে হয়। আবর্জনা ও দূষিত পানি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলের মানের উন্নতি, গ্রামের রাস্তা শক্ত ও মজবুত করা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে গেল কয়েক বছরে শাংহাইয়ের গ্রামের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। পারিবারিক হোটেল ব্যবসাও গ্রামের অবস্থা পরিবর্তন করে। গ্রামের বাসিন্দাদের আয় বৃদ্ধি হয়েছে এবং জমির মূল্যও অনেক বেড়েছে।
শাংহাইয়ের হং ছিয়াও গ্রামে যারা পারিবারিক হোটেলের সমবায়ে যোগ দিয়েছেন তাদের বার্ষিক আয় ৭০ থেকে দেড় লাখ ইউয়ানের মতো। হোটেলের আধুনিক অবকাঠামোর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকরাও শহরের উন্নত জীবনযাপন উপভোগ করতে পারেন। তারা কফি পান করেন, বই পড়েন, গান গান।
আধুনিক কৃষির উন্নয়ন মানে সীমিত জমি ব্যবহার করে আরও বেশি লাভ বের করা। ২০২১ সালে শাংহাইয়ে চালু হয় কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রম ২০২১-২০২৫ এবং এতে বলা হয়- সবুজ উন্নয়নকে কেন্দ্র করে কৃষির উচ্চ মানের উৎপাদন, উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সরঞ্জাম ব্যবহার এবং উচ্চ মানের ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা।
ছুং মিং দ্বীপ শাংহাইয়ের বৃহত্তম গ্রামীণ অঞ্চল। সেখানে ধান চাষের জমির আয়তন ১৮,০০০ হেক্টর এবং ধান চাষের প্রক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। ওয়ে কাং জেলায় “ডিজিটাল মনুষ্যবিহীন খামারে ধান চাষ করা হয়। খামার ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট ডিভাইস ও অনলাইন কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইয়াও লু গ্রামে চালু হয়েছে শাংহাইয়ের প্রথম ‘৫জি বুদ্ধিমান ডিজিটাল ধান রোপণ প্রদর্শন এলাকা’। সেখানে রোদ, তাপমাত্রা, বাতাস, বৃষ্টিপাতসহ নানা উপাত্ত সংগ্রহ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদমের মাধ্যমে বপন, নিষিক্তকরণ, সেচ এবং ফসল কাটার পুরো প্রক্রিয়াটি বুদ্ধিমত্তার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ঐতিহ্যিক কৃষিকাজ ছোট আকারের ও বিক্ষিপ্ত ছিল। এখন কৃষি সমবায়, পারিবারিক খামার কৃষি উন্নয়নের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যুবক ইউ চিয়ে একজন কৃষক। চলতি বছর তার গ্রামে সাধারণ চালের দাম আধা কেজি ১.৬৯ ইউয়ান এবং ইউ চিয়ে চাষ করা বিশেষ এক ধরনের চালের দাম- আধা কেজি ৮ ইউয়ান। স্থানীয় কৃষকরা অবাক হয়ে বলেন যে, ইউ চিয়ের চাল অনেক দামি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আসলে ইউ চিয়ের চাষ করা ওই ধান শাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটি লাইফ সায়েন্সেস বিভাগের বীজ সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র আবিষ্কার করা নতুন প্রজাতির ধান। এ চাল সুশি এ জাপানি খাবার তৈরির জন্য উপযোগী এবং তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২০ সালে ইউ চিয়ে গ্রামে ফিসে এসে একটি কৃষি পণ্যের সমবায় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সবুজ কৃষিপণ্যের ব্যবসার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। কারণ জীবনযাপন মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের মানের ওপর আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মানুষ।
২০১৪ সালে ইউ চিয়ের মতো ফান ইয়াও নামে আরেকজন যুবক শহরের চাকরি ছেড়ে ছুং মিং দ্বীপে তার বাসায় ফিরে যান। তিনি ২০ হেক্টর জমি ভাড়া করে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রাগন ফলসহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলের চাষ শুরু করেন। গ্রিনহাউজের পাশে ছোট একটি অস্থায়ী ঘরে বাস করেন তিনি এবং প্রতিদিন গ্রিনহাউজে কাজ করেন। তার চেষ্টায় লাল ক্রিস্টাল নামে একটি ড্রাগন ফলের চাষ সম্ভব হয়েছে। চলতি বছর তিনি ২০ হাজার কেজি ফল সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি তিনি শাংহাইয়ের স্কুলের সঙ্গে সহযোগিতা করে শিক্ষার্থীদের জন্য কৃষিকাজ জায়গা দেন। এটাও বেশ জনপ্রিয় হয়।
হাই শেন গ্রামটি শাংহাইয়ের প্রথম গ্রাম, যেখানে চালু হয় সাবওয়ে। সিনিয়র সাংবাদিক শেন ইউয়ে মিং এ গ্রামের মানুষ। গত শতাব্দীর ৯০ দশকে তিনি শাংহাই নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামে ফিরে যেতে ৬ ঘণ্টা সময় লাগত। শাংহাই থেকে সিন চিয়াংয়ের উরুমুছি যেতে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টার ফ্লাইট লাগে। শাংহাইয়ে থাকলেও গ্রামের বাড়ি ছিল তার জন্য বহুদূর।
সাবওয়ে চালু হবার পর এই পথে যেতে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগে। তাই সেন ইউয়ে মিংয়ের মা- যাঁর বয়স ৭০ বছরের বেশি, মাঝে মাঝে তাজা শাকসবজি নিয়ে সাবওয়েতে চড়ে ছেলেকে দেখতে আসেন।
সাবওয়ে গ্রামটিকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। গ্রামের প্রধান চুাং পিং জানান, এখন গ্রামের বাসিন্দারা বাসায় বসে শহরের মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারেন। গ্রামেও পাওয়া যায় কফির দোকান। আগে গ্রামের বাসিন্দারা শুধু ইনস্ট্যান্ট কফি খেতে পারত আর এখন তারাও গ্রাউন্ড কফি পান করতে পারে।
সেন ইউয়ে মিংয়ের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বিশ্বের অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন গ্রামের সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন করতে চাইলে রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। এক্ষেত্রে পরিবহন অবকাঠামো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রাম ও শহরের একীকরণ জোরদার করেছে গাড়ি এবং বুলেট ট্রেন জাপানের শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমিয়ে দিয়েছে। গ্রামগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা পরিবহন অবকাঠামো নেটওয়ার্ক- নিঃসন্দেহে গ্রামের পরিবর্তন ঘটাবে। পরিবহনের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিশ্চয়তা ও প্রবীণদের যত্নসহ নানা ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে গণ-পরিষেবার মান উন্নত করছে শাংহাই।
গ্রামের জমি ও শান্ত জীবন আমাদের আশা বাড়ায় এবং সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব পালন করে। বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতের নিশ্চয়ই একদিন গ্রামগুলো আমাদের অভিন্ন সুন্দর, সুখী বাসগৃহে পরিণত হবে।
সূত্র:চায়না মিডিয়া গ্রুপ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Design & Developed by : BD IT HOST