স্থানীয় সময় ১৫ নভেম্বর, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সংবাদদাতাদের বৈঠকের বিষয় অবহিত করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন বৈঠক করেছেন, যা চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দুই নেতার বৈঠক কেমন হয়েছে? এই বৈঠকের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তরে চীনা মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সান ফ্রান্সিসকোতে গিয়েছেন। তাঁকে এপেক নেতাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্যও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এইমাত্র, ফিলোরি ম্যানরে অনুষ্ঠিত দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকটি খুব ভালো হয়েছে। বৈঠক সার্বিক ও গভীর ছিল।
বৈঠকের তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
প্রথমত, এটির কৌশলগত বৈশিষ্ট্য। প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বৈঠকের জন্য একটি বিশেষ আমন্ত্রণ পাঠান, যা এপেক সময়কালে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সাধারণ ব্যবস্থা থেকে আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে বলেছে যে, এটি একটি চীন-মার্কিন “শীর্ষ সম্মেলন”। বলা যায়, বৈঠকের স্বাতন্ত্র্যের দিক থেকে হোক বা চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগের মাত্রা থেকে হোক বা বৈঠকের গুরুত্বের দিক থেকে হোক, এটি একটি কৌশলগত গুরুত্ববহ শীর্ষ সম্মেলন।
দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। চীন-মার্কিন সম্পর্ক একটি সংকটময় পর্যায়ে থাকার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্থিতিশীল চীন-মার্কিন সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ছয় বছর পর আবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং দুই রাষ্ট্রপ্রধান এক বছর পর আবার পরস্পরের মুখোমুখি হন। এতে চীন-মার্কিন কূটনীতির ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও সমসাময়িক মূল্য প্রতিফলিত হয়। বছরের পর বছর ধরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যে আদান-প্রদান অব্যাহত রয়েছে এবং নিশ্চিতভাবেই এটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের ইতিহাসে একটি মাইলফলক এবং আজকের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি বড় ঘটনা।
তৃতীয়ত, নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। সভাটি ৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়েছে। দুই রাষ্ট্রপ্রধান মুখোমুখি হয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন, একে অপরের সাথে সঠিক বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠা করেছে, সঠিকভাবে মতভেদ মোকাবিলা করেছে এবং সংলাপ ও সহযোগিতার মতো বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। দু’পক্ষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ, ইউক্রেন সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা নিয়ে সার্বিকভাবে মত বিনিময় করেছে। তাছাড়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দু’টি প্রধান দেশ কিভাবে সহাবস্থান করতে পারে এবং বড় দেশ হিসেবে কিভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করেছে দু’পক্ষ। দু’পক্ষ একটি ভবিষ্যত -ভিত্তিক “সান ফ্রান্সিসকো ভিশন” গঠন করেছে, যা একটি সুস্থ, স্থিতিশীল ও টেকসই চীন-মার্কিন সম্পর্কের দিক নির্দেশ করে।
এই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কোন কোনো বিষয়ে আলোকপাত করেছেন?
উত্তরে ওয়াং ই বলেন, চীন-মার্কিন সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত কৌশলগত, সামগ্রিক এবং দিকনির্দেশনামূলক বিষয়গুলোর পাশাপাশি, বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত প্রধান বিষয়গুলোতে পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশে দুই রাষ্ট্রপ্রধান মত বিনিময় করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্থিতিশীল ও উন্নত করার বিষয়ে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো রয়েছে:
প্রথমটি হল, সঠিক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার না প্রতিদ্বন্দ্বী? দু’পক্ষ পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা চায় নাকি সংঘর্ষ চায়? এটি একটি মৌলিক সমস্যা এবং কোনো ধ্বংসাত্মক ভুল করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইঙ্গিত করেছেন যে, ইতিহাস হল সেরা পাঠ্যপুস্তক এবং বাস্তবতা হল সর্বোত্তম চিন্তাশীল এজেন্ট। আমরা আশা করি যে, দুই দেশ অংশীদার হতে পারে, উভয় পক্ষের স্বার্থে সহযোগিতার এজেন্ডা নিয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক কাঠামোতে ইতিবাচকভাবে যোগাযোগ করতে পারে। এইভাবে, চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে।
দ্বিতীয়ত, সহাবস্থানের সঠিক উপায় খুঁজে বের করা। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সামাজিক ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু একে অপরের সাথে যোগাযোগে এটি কোনো সমস্যা নয়। অপর পক্ষকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা অবাস্তব এবং সংঘর্ষ ও বিরোধ অসহনীয়। সঠিক পদ্ধতি হল, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করা। এই তিনটি নীতি শুধুমাত্র বিগত অর্ধশতাব্দীতে চীন-মার্কিন সম্পর্ক থেকে অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা, এবং ইতিহাসে প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের গভীর উদ্ঘাটনও। এটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করার দিকনির্দেশনা হওয়া উচিত।
তৃতীয়ত, “সান ফ্রান্সিসকো ভিশন” তৈরি করা। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত যৌথভাবে নিজেদের মধ্যে একটি সঠিক গড়ে তোলা, যৌথভাবে কার্যকরভাবে মতভেদ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যৌথভাবে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা প্রচার করা, যৌথভাবে প্রধান শক্তির দায়িত্ব বহন করা এবং যৌথভাবে জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় উন্নয়ন করা। এই “পাঁচটি অভিন্নতা” চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীল বিকাশের জন্য পাঁচটি স্তম্ভ স্থাপন করেছে এবং চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মুক্ত করার সমতুল্য।
রাষ্ট্র প্রধানদের এই বৈঠকে কী ঐকমত্য ও ফলাফল অর্জিত হয়েছে?
উত্তরে চীনা মুখপাত্র বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের ফলাফল বহুমুখী। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে, উভয় পক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংলাপ ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং রাজনীতি ও কূটনীতি, সাংস্কৃতিক বিনিময়, বৈশ্বিক শাসন, সামরিক নিরাপত্তা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে ২০টিরও বেশি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এগুলোর কয়েকটি বৈঠকের আগেই গৃহীত হয়েছে এবং কয়েকটি বৈঠকের সময় আলোচনা করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে:দিকনির্দেশনা নীতির ক্ষেত্রে, দুই রাষ্ট্রপ্রধান বালিতে তাদের বৈঠকের পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক দল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকনির্দেশক নীতিগুলো নিয়ে আলোচনা করার প্রচেষ্টা ও ঐকমত্যের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তারা একে অপরকে সম্মান করার, শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করার, যোগাযোগ বজায় রাখার, দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ করার, জাতিসংঘের সনদ মেনে চলার, অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিযোগিতামূলক বিষয়গুলো দায়িত্বশীলভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। এই সাতটি ঐকমত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উভয় পক্ষের মধ্যে পরবর্তী গভীর আলোচনার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করবে। দুই রাষ্ট্রপ্রধান এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে নিজ নিজ কূটনৈতিক দলকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সংলাপ এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে, উভয় পক্ষ উচ্চ-পর্যায়ের বিনিময়কে শক্তিশালী করার এবং বাণিজ্য, অর্থনীতি, অর্থ, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়, মহাসাগর, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও অপ্রসারণ, পররাষ্ট্র নীতি পরিকল্পনা, যৌথ কর্মগ্রুপ, এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রচার ও প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই পক্ষ ‘চীন-মার্কিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তি’ পুনর্নবীকরণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে এবং কৃষিবিষয়ক চীন-মার্কিন যৌথ কমিটি পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে।
মানুষে মানুষে ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে, উভয় পক্ষ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। পরের বছরের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাড়াতে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষ। চীন-মার্কিন শিক্ষাগত সহযোগিতার বিষয়েও সম্মত হয়েছে দু’পক্ষ। বিদেশী শিক্ষার্থী বৃদ্ধিকে উত্সাহিত করা হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, যুব এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের আদানপ্রদানকে শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষ।
বৈশ্বিক শাসনের ক্ষেত্রে, দুই রাষ্ট্রপ্রধান জোর দিয়ে বলেছেন যে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা উচিত। তাঁরা দুই দেশের জলবায়ু দূতদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক সক্রিয় আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ২০২০-এর দশকে কার্বন-নির্গমন কমানোর ক্রিয়াকলাপ, এবং যৌথভাবে কপ২৮8-এর সাফল্যকে উন্নত করা এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে “শক্তিশালী জলবায়ু অ্যাকশন কর্মগ্রুপ” চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’পক্ষ। উভয় পক্ষ “জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে সানশাইন ল্যান্ড স্টেটমেন্ট” জারি করেছে। উভয় পক্ষই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংশ্লিষ্ট আন্তঃসরকারি সংলাপ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়েছে।
সামরিক নিরাপত্তা এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে, উভয় পক্ষ সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে দুই সামরিক বাহিনীর মধ্যে উচ্চ-স্তরের যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে; চীন-মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের কার্য বৈঠক, চীন-মার্কিন সামুদ্রিক সামরিক নিরাপত্তা পরামর্শ পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে। চীনা ও আমেরিকান সামরিক বাহিনীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের হট-লাইন থাকবে। দুই পক্ষ মাদকবিরোধী সহযোগিতার জন্য চীন-মার্কিন মাদকবিরোধী সহযোগিতা কর্মগ্রুপ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে।
দুই রাষ্ট্রপ্রধান একমত হয়েছেন যে, উভয় পক্ষের দল উচ্চ-স্তরের প্রক্রিয়া এবং পরিদর্শন বিনিময় অব্যাহত রাখবে এবং সান ফ্রান্সিসকো বৈঠকের ফলো-আপ অনুসরণ করবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য এবং অর্জনগুলো আরও স্পষ্ট করে যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং আরও নিশ্চিত করে যে, পারস্পরিক উপকারিতা এবং জয়-জয় নীতি হল চীন-মার্কিন সম্পর্কের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য এবং আলোচনা ও সহযোগিতাই চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত।
এই বৈঠকে, উভয় পক্ষ কী পার্থক্য এবং সংবেদনশীল বিষয়ে আলোচনা করেছে? চীনের অবস্থান এবং মনোভাব কী?
উত্তরে ওয়াং ই বলেন, অবশ্যই অনেক মতবিরোধ এবং সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন যে, চীন একটি স্থিতিশীল, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই চীন-মার্কিন সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সময়ে, চীন নিজের বৈধ স্বার্থ, নীতিগত অবস্থান এবং লাল লাইন রক্ষা করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রতিযোগিতার নামে চীনকে অবরোধ ও দমনে জোর দেয়, তবে চীন দৃঢ়ভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষা করবে।
তাইওয়ান বিষয় বরাবরই চীন-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের নীতিগত অবস্থানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। চীনের দাবি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক-চীননীতি’ মেনে চলতে হবে, “তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করতে হবে”, তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে হবে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, এবং চীনের শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনকে সমর্থন করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে চীনের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও দমন “ঝুঁকি অপসারণ” নয় বরং ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এই ভুল চেষ্টা এবং তা চীন-মার্কিন সম্পর্কের ওপরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দমন করা হচ্ছে চীনের উচ্চমানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা এবং চীনা জনগণকে তাদের উন্নয়নের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। আমরা কখনোই এটা মেনে নেব না এবং তা কখনোই সফল হবে না। চীনের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী অন্তঃসত্ত্বা চালিকাশক্তি এবং ঐতিহাসিক যুক্তি রয়েছে এবং কোনো বাহ্যিক শক্তি একে থামাতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনের উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া, একতরফা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ সৃষ্টি করা।
সান ফ্রান্সিসকো বৈঠক বর্তমান এবং ভবিষ্যতের চীন-মার্কিন সম্পর্কের উপর কী প্রভাব ফেলবে?
উত্তরে চীনা মুখপাত্র জানায়,সান ফ্রান্সিসকো বৈঠকটি চীন-মাকিন সম্পর্কের জন্য বিশ্বাস বৃদ্ধি, সন্দেহ দূরীকরণ, মতভেদ নিয়ন্ত্রণ এবং সহযোগিতা সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এটি একটি অশান্ত ও পরিবর্তনশীল বিশ্বে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে, চীন-মার্কিন সম্পর্কের বিশাল জাহাজ বিপজ্জনক ঢেউ অতিক্রম করে বালি থেকে সান ফ্রান্সিসকো পৌঁছানো সহজ ছিল না। তবে সান ফ্রান্সিসকো শেষ স্টপ নয়, বরং একটি নতুন সূচনা হতে পারে। আমরা সবসময় বিশ্বাস করি যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহাবস্থানের সঠিক উপায় খুঁজে বের করা উচিত এবং তা সম্ভবও। এটি একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজন, যুগের প্রবণতা এবং জনগণের প্রত্যাশা। আগামী বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী। উভয় পক্ষের উচিৎ সান ফ্রান্সিসকো থেকে শুরু করা, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা, চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও সুসংহত করা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্তম্ভ তৈরি করা এবং একটি সুস্থ, স্থিতিশীল ও টেকসই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
সূত্র: চায়না মিডিয়া গ্রুপ।